দিল্লি বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ব্যবহার আপনার সিম, হুমকি ফোন চেয়ারম্যান সহ তিন কাউন্সিলারকে
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: ‘দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে আপনার নামে তোলা সিম ব্যবহার করা হয়েছে। রাতের মধ্যে সপরিবারে গ্রেফতার হবেন।’ আধা বাংলা উচ্চারণে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ফোন পেয়ে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অলকা সেনমজুমদার। কোনও পুলিশ আধিকারিক তাঁকে ফোন করেছেন বলে তিনি মনে করেন। ফলে তিনি ওই ব্যক্তিকে জানান, তাঁর নামে মাত্র দু’টি সিমকার্ড ইশ্যু হয়েছে। সেই দু’টিই বর্তমানে তাঁর মোবাইলের মধ্যে রয়েছে। অতিরিক্ত কোনও সিম তিনি কোনওদিনই তোলেননি। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও সে একই কথা বলে যায়। শেষে পাশে থাকা ছেলে সতর্ক করায় ফোন কেটে দেন অলকাদেবী। পরে ফের তাঁকে অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তি ফোন করায় তিনি নম্বরটি ব্লক করে দেন। শুধু চেয়ারম্যানই নন, গত দু’দিন ধরে বাঁকুড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হীরালাল চট্টরাজ ও তিন মহিলা কাউন্সিলার একই ধরনের ফোন পাচ্ছেন। ঘটনায় শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার ভাইস চেয়ারম্যান বাঁকুড়া সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কী উদ্দেশ্যে পরপর পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের ফোন করা হচ্ছে, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। ফোনে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হলেও কারও কাছে টাকা চাওয়া হয়নি। তবে তাঁদের ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাইবার প্রতারণার চেষ্টা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সাইবার প্রতারকরা এখন জনপ্রতিনিধিদের টার্গেট করছে। এর আগে বিধায়কদের এনিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। জেলার সব কাউন্সিলারকেও আমরা সতর্ক করছি। চেয়ারম্যান বলেন, দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে গিয়েছে বলায় প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ফলে অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে বিষয়টি ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছিলাম। ওইসময় বাড়িতেই ছিলাম। পাশে আমার ছেলে ছিল। সে আমাকে সতর্ক করে। তখন ফোন কেটে দিই। ফের ওই নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। তবে তা রিসিভ করিনি। পরে নম্বর ব্লক করে দিই। তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের নম্বর সকলের কাছেই থাকে। পুর পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শহরবাসী ফোন করে। ফলে অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন অহরহ রিসিভ করতে হয়। তবে ওই ঘটনার পর কিছুটা উদ্বেগে রয়েছি।
ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এদিন সকাল ১০টা নাগাদ আমার মোবাইল নম্বরে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ফোন করে। সে বিধাননগর থেকে কথা বলছে বলে জানায়। চেয়ারম্যানের মতোই আমার নামও দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িয়েছে বলে জানানো হয়। ওই ব্যক্তির পরিচয়, ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চেয়ে চেপে ধরতেই ফোন কেটে দেয়। একই কথা বলে বুধবার রাতে এক মহিলা কাউন্সিলার ও তাঁর স্বামীকে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হয়। এদিন প্রথমে বিষয়টি বাঁকুড়া সদর থানার আধিকারিকদের জানাই। পরে সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।