সরকারি চালান জালিয়াতির চেষ্টায় গ্রেফতার আইনজীবী, তীব্র শোরগোল শুরু কালীগঞ্জে
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: মিউটেশন সংক্রান্ত সরকারি চালান জালিয়াতির অভিযোগে এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করল কালীগঞ্জ থানার পুলিশ। ধৃতের নাম প্রসন্ন আইচ। সরকারি নথি জাল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতানোর চেষ্টা করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে। দপ্তরের তরফে অভিযোগ দায়ের হতেই পুলিশ ওই আইনজীবীকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার তাঁকে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হয়। বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, এই জালিয়াতি চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। কারণ কালীগঞ্জ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে মুহুরিদের দাপাদাপি নতুন নয়। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার দপ্তর চত্বর সমস্যা দেখা গিয়েছিল। তবে যেভাবে অনায়াসে অন্যজনের চালানকে জালিয়াতি করে টাকা হাতানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তা উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে প্রশাসন মহল।
নদীয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নৃপেন্দ্র সিং বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর দপ্তরের তরফ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। আমরা দপ্তরের আভ্যন্তরীণ তদন্তও শুরু করেছি। এর সঙ্গে আর কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পুলিশ ও দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেলে ধৃত আইনজীবী প্রসন্ন আইচ রাজস্ব আধিকারিকের কাছে হাজির হয়ে বিনীতা মুখোপাধ্যায়ের নামে দাখিল হওয়া একটি মিউটেশন মামলার হার্ড কপি জমা দেন। শুনানির সময় আধিকারিক নথিপত্র যাচাই করে দেখেন, ওই মামলার প্রকৃত প্রসেসিং ফি হওয়ার কথা ৩৯ হাজার ৩৭ টাকা। কিন্তু আইচের জমা দেওয়া চালানে উল্লেখ রয়েছে মাত্র ৫৪০ টাকা। পোর্টালে যাচাই করার সময় অসঙ্গতি মেলায় বিষয়টি আরও সন্দেহজনক মনে হয়।
এর কিছুক্ষণ পরে প্রসন্ন আর একটি চালান পেশ করেন এবং দাবি করেন সেটিও বিনীতা মুখোপাধ্যায়ের নামে জমা। কিন্তু পোর্টাল দেখে রাজস্ব আধিকারিক জানতে পারেন, ওই চালানে ৬৯ হাজার ২৬৭ টাকা জমার কথা দেখানো হলেও তা আসলে মতিউর রহমান নামে এক ব্যক্তির সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য আগেই জমা হয়েছে। এখানেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ওই চালানের কিউআর কোড স্ক্যান করা হয়। স্ক্যান করতেই সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—চালানটি আসলে প্রিয়া প্রামাণিক নামে এক মহিলার। যার প্রকৃত মূল্য মাত্র ১০০ টাকা। একই চালানে তিন ধরনের তথ্য—ভিন্ন নাম, ভিন্ন টাকা এবং ভিন্ন উদ্দেশ্য। অতঃপর, স্পষ্ট হয়ে যায় সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে চালান জালিয়াতির চেষ্টা হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই দপ্তরের তরফে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, চালান নকল করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার এই চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত চলছে। কালীগঞ্জ থানার এক আধিকারিক বলেন, সরকারি চালান জালিয়াতির অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।