শতাব্দীর সামনেই তৃণমূল নেতাদের মার, তোলাবাজিতে অভিযুক্ত অঞ্চল সভাপতি, চাঞ্চল্য
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ উঠছিল। সিউড়ি-২ ব্লকের কোমা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি বলরাম বাগদির উপর দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন ওই অঞ্চলের গাংটে গ্রামের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সাংসদ শতাব্দী রায়ের সঙ্গে অঞ্চল সভাপতি গাংটে গ্রামে যেতেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সাংসদের সামনেই অঞ্চল সভাপতি, তাঁর ভাই ও অনুগামীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। আক্রান্ত তৃণমূল নেতাদের নিজের গাড়িতে তুলে গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সাংসদের গাড়ি লক্ষ্য করে জুতো ছোঁড়া হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয় সিউড়ি থানার পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিউড়ি-২ ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চলে তৃণমূলের এসআইআর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন সাংসদ শতাব্দী রায়। মানুষের সুবিধা অসুবিধার কথা শোনেন তিনি। সাংসদ ওই ব্লকের কোমা অঞ্চলের গাংটে গ্রামে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বলরাম বাগদি ও তাঁর অনুগামীরা। অঞ্চল সভাপতির প্রশংসাও শোনা যায় শতাব্দীর গলায়। ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংসদ বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠার সময় অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে চড়াও হয় বাসিন্দাদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে বলরামকে নিজের গাড়িতে তুলে সাংসদ বেরিয়ে যেতে চাইলে বলরামের ভাই প্রহ্লাদ বাগদিকে হাতের কাছে পেয়ে যায় গ্রামবাসীরা। তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। যা দেখে বলরাম গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। তাঁকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। বলরামকে উদ্ধার করতে তার অনুগামীরা এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। অনেকেরই রক্ত ঝরে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও আক্রান্ত হন। সাংসদের নিরাপত্তারক্ষীরা পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কোনওভাবে সাংসদকে গ্রাম থেকে থেকে বের করতে চেষ্টা করে তারা।
সেইসময় হঠাৎই সাংসদের গাড়ির চাকার সামনে শুয়ে পড়েন এক মহিলা। ওই মহিলাকে নিয়ে ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয়। টেনেহিঁচড়ে তাঁকে চ্যাংদোলা করে কোনওরকমে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সাংসদের অনুগামীরা। কিছুক্ষণ পরই সিউড়ি থানার আইসি সঞ্চয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জখম কয়েকজনকে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়।
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর ভাইয়ের উপর গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। যে মহিলা সাংসদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন তিনি বলেন, আমাকে দু’কাঠা জায়গা দেওয়ার নাম করে এক লক্ষ টাকা নিয়েছিল। আমি সোনা বন্ধক দিয়ে সেই টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই জায়গা দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নি। ওই অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে সরকারি জমির পাট্টা, আবাস যোজনার বাড়ি কিংবা অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। সিউড়ি-২ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা এই বলরাম। বলরাম বলেন, আমার সঙ্গে নুরুলের বিরোধ রয়েছে। তাঁর অঙ্গুলিহেলনে এই ঘটনা ঘটেছে। সাংসদ না থাকলে আমি খুন হয়ে যেতাম। পাল্টা নুরুল বলেন, বলরাম বহু সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। সাংসদ শতাব্দী অবশ্য বলেন, গোষ্ঠীকোন্দল আছে। তবে, যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা প্রত্যেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের। অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে শতাব্দী বলেন, অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি আগে প্রমাণ হোক। যে যা খুশি তো অভিযোগ করতেই পারে।