ভূতের ভেংচি থেকে পাখির কনসার্ট নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় একে অপরকে টেক্কা
বর্তমান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি: কার্তিক পুজোর সময় ভিড়ে ঠাসা ছিল বাঁশবেড়িয়া। নিরঞ্জনের শোভাযাত্রাতেও ভিড় হবে, এ প্রত্যাশা ছিল সবার। বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা সেই প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেল। বিকেল থেকেই কার্তিক-নগরীর রাস্তার দু’ধারে ঠাঁই নাই অবস্থা। নিরঞ্জনপর্ব শুরু হতেই ভিড় বেড়ে গেল কয়েক গুণ। উৎসবের শেষ দিন সুষ্ঠুভাবে উতরে দিতে প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রুটি ছিল না। মানুষ নির্বিঘ্নে দেখলেন নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা নজর কাড়ল দর্শকদের।
এদিন আগেভাগেই ভদ্রেশ্বর থেকে বাঁশবেড়িয়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন দুলাল সাউ নামে এক দর্শক। দেখলেন, শোভাযাত্রায় রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ‘তেনাদের’ দাপট। আসলে ষড়াণন কার্তিকের শোভাযাত্রার এবার মূল আকর্ষণ ছিল ভূতেদের শোভাযাত্রা। কোনও ভূত হুংকার ছাড়ে, তো কেউ ভেংচি কাটে। কারও বিকট হাসি হাড়ে হিম ধরায়। অবাক করা ভুতেদের ব্যপারস্যাপার দেখে আনন্দ পেয়েছে আট থেকে আশি। বাঁশবেড়িয়ার বলাকা সংঘ শোভাযাত্রায় চন্দননগরের সেরা আলোর খেলা দেখিয়েছে। শোভাযাত্রার থিম, পাখিদের কনসার্ট। কণ্ঠসঙ্গীতে কোকিল, গিটারে পেঁচা, টিয়ার হাতে ভায়োলিন, সঙ্গত করেছে ময়না, এমনই সব আশ্চর্য মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। বালক সংঘ তাদের শোভাযাত্রায় হাজির করে বিরাট আয়তনের তালা। সঙ্গে গাছগাছালির সমাবেশও ছিল।
চুঁচুড়া ও বাঁশবেড়িয়া মিলে ৪৫টি পুজো কমিটি শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পথে নামে ১৫০টির মতো সুসজ্জিত গাড়ি। ছিল প্রায় ১০০টি ব্যান্ড। রাজ্য, দেশ এমনকি বিদেশ থেকেও ব্যান্ড হাজির করার দাবি জানিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স রীতিমতো সাড়া ফেলল শোভাযাত্রায়। এদিন দু’টি জায়গা থেকে শোভাযাত্রার গাড়ি পরিক্রমায় অংশ নেয়। একটি ব্যান্ডেল চার্চ ও অন্যটি ধোবাঘাট মোড়। দু’টি পথই হংসেশ্বরী মন্দির হয়ে গিয়ে মিলেছে কল্যাণী সেতুর কাছে। তারপর সেখান থেকে একটি পথ সরাসরি ঘাটে চলে যায়। অন্যটি কেওটা হয়ে নিরঞ্জন ঘাটে ঢোকে।
বিপুল সংখ্যক গাড়ির বহর ও ভিড়ের দাপট সামাল দিতে বুধবার রাত থেকেই পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি সক্রিয় ছিল। নিরাপত্তার জন্য জল-সড়ক ও ট্রেনপথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। পুলিশে ছয়লাপ ছিল শহর। ছিল সাদা পোশাকের পুলিশও। শোভাযাত্রার জন্য ছ’টি বাফার জোন তৈরি করেছিল প্রশাসন। অর্থাৎ নিরঞ্জনের পথে কোনও গাড়ি খারাপ হলে, তাকে আলাদা জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা শহর। প্রশাসনিক তৎপরতার সুফল মিলেছে। কেন্দ্রীয় কার্তিক পুজো কমিটির প্রাক্তন সভাপতি আদিত্য নিয়োগী দাবি করেন, নিরঞ্জনের গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। নির্বিঘ্নে শোভাযাত্রা দেখতে পেরেছেন সবাই।