নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইতিমধ্যে এসআইআর আতঙ্ক বাংলায় প্রাণ কেড়েছে ৩১ জনের। পাশাপাশি, পাহাড়প্রমাণ কাজের চাপে দুই বিএলওর মৃত্যু হয়েছে বলেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। কেন এই পরিস্থিতি? কেন ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণের নামে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে? এই প্রশ্ন তুলে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই ‘গেরুয়া শিবির নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগছিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবার সরাসরি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি দিলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘অপরিকল্পিতভাবে এবং অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে এসআইআর করা হচ্ছে। তাতে বিএলওদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপরও অমানবিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে এক বিপজ্জনক ও বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এই হঠকারী সিদ্ধান্তের শিকার হচ্ছেন নির্বাচনী আধিকারিক থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা।’
কয়েক মাসের মধ্যে এসআইআর করে আসলে গেরুয়া শিবিরের হয়ে নির্বাচন কমিশন বৈধ ভোটারদের নাম কাটার খেলায় নেমেছে বলে আগাগোড়া সুর চড়িয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনও তার অন্যথা হয়নি। এই মৃত্যু মিছিল থামাতে অবিলম্বে পরিকল্পনাহীন এসআইআর স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন জ্ঞানেশ কুমারকে। বিএলও হিসেবে কর্মরত স্কুলশিক্ষক এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘যে নির্ধারিত সময়ে এসআইআর শেষ করার কথা বলা হচ্ছে, সেই কাজটা করা অসম্ভব এবং অসাধ্য।’ তাঁর কথায়, তিন বছরের কাজ নির্বাচন কমিশন মাত্র তিন মাসে শেষ করার টার্গেট ধার্য করেছে। সেইসঙ্গে বিএলওদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইনিউমারেশন ফর্মের তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজ করানো হচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় অনেক জায়গায় যখন বিএলওরা ‘ডেটা এন্ট্রি’ করতে যাচ্ছেন, তাঁদের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন বহু বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা থাকছে, তেমনই তথ্য আপলোডের ভুলের সম্ভাবনাও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, ঠিকঠাক নেটওয়ার্কের অভাবে ডেটা এন্ট্রিতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগছে। এই সমস্ত বাধা পেরিয়ে কর্মরত বিএলওদের মনোবল বাড়ানোর বদলে কমিশনের চোখরাঙানির জেরে তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। ‘ভুল করলে কিন্তু শাস্তির মুখে পড়তে হবে’—রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অফিস থেকে বিএলওদের এহেন বার্তার বিরোধিতাও মমতা করেছেন জ্ঞানেশ কুমারকে লেখা চিঠিতে। জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির বিএলওর মৃত্যুর ঘটনাও।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে জোরকদমে চলছে ধান চাষ। সেইসঙ্গে রবিশস্য রোপণ। আলু চাষেও ব্যস্ত কৃষকরা। ফলে লক্ষাধিক কৃষক এবং ভাগচাষির পক্ষে বর্তমানে এসআইআর কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া নিয়েও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মমতা।