• শিশুশিক্ষায় ভারতীয় জ্ঞান–ঐতিহ্যের সমন্বয়
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • ভারতের প্রাচীন জ্ঞান–ঐতিহ্যকে আধুনিক দক্ষতা–উন্নয়ন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন দিশা আনতে ঐতিহাসিক সমঝোতা স্মারকে সই করল দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট ও উদ্যোগ–উন্নয়ন এবং পেশাগত দক্ষতা পরিষদ (এম ই পি এস সি)–র সঙ্গে ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার (বিআরসি) একটি দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শিক্ষামহলের একাংশের মত, এই উদ্যোগ আগামী দিনের শিশুশিক্ষা ও শিক্ষক–প্রশিক্ষণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।

    সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, প্রি–স্কুল ফ্যাসিলিটেটর ও শিশুপালন–সহায়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ভারতীয় জ্ঞানব্যবস্থার প্রধান মূলনীতি—‘সামগ্রিক শিক্ষা’, ‘মূল্যবোধভিত্তিক পাঠদান’, ‘শিশুর প্রাথমিক জ্ঞান–বিকাশ’ এবং ‘সাংস্কৃতিক ভিত্তির দৃঢ়তা’—এসবকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এর ফলে শিশুশিক্ষার প্রাথমিক ধাপ থেকেই শিক্ষার্থীরা আধুনিক দক্ষতার পাশাপাশি দেশজ জ্ঞানের শিকড়ে গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

    এম ই পি এস সি–র প্রধান কর্তা অনিল পোখরিয়াল অনুষ্ঠানে বলেন, এই সহযোগিতার মাধ্যমে যে প্রধান কাজগুলি করা হবে তার মধ্যে রয়েছে—

    • ভারতীয় জ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ–বিষয়বস্তু তৈরি,

    • গবেষণানির্ভর ও প্রাচীন পদ্ধতি থেকে অনুপ্রাণিত শিক্ষামডিউল তৈরি,

    • প্রাথমিক শিশুশিক্ষা নিয়ে যৌথ গবেষণা পরিচালনা,

    • নতুন পাঠ্যক্রম উদ্ভাবন,

    • শিক্ষক–প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি গড়ে তোলা।

    তাঁর কথায়, ‘প্রাচীন শিক্ষাপদ্ধতির শক্ত ভিতকে আধুনিক দক্ষতা–উন্নয়ন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ভবিষ্যতের শিক্ষক তৈরির ক্ষেত্রেই এই সহযোগিতা নতুন যুগের সূচনা করবে।’

    বিআরসি–র ডিন সুমন্ত রুদ্র বলেন, ‘ভারতীয় জ্ঞান–ঐতিহ্যই বিকশিত ভারতের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদের গবেষণা ও একাডেমিক কাজের সাফল্য স্বীকৃত। এই নতুন সমঝোতা আমাদের সেই অভিজ্ঞতাকে বৃহত্তর পরিসরে প্রয়োগ করতে সুযোগ দিচ্ছে, বিশেষত এমন শিক্ষক তৈরিতে, যাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি গড়ে তুলবেন।’

    এই উদ্যোগে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত হয়েছে নালন্দা লার্নিং সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা–নির্দেশক তমাল মুখার্জী জানিয়েছেন, প্রি–স্কুল ফ্যাসিলিটেটর প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষণ–বিষয়বস্তু তৈরি এবং প্রশিক্ষণ প্রসারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন।

    শিক্ষাজগতের মতে, প্রাথমিক স্তর থেকেই যদি শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ, সামগ্রিক চিন্তাশক্তি এবং সাংস্কৃতিক শিকড়কে দৃঢ় করা যায়, তবে তা কেবল শিক্ষার মানই বাড়াবে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও দায়িত্ববান, আত্মবিশ্বাসী ও সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তুলবে। ভারতের জ্ঞান–ঐতিহ্যকে আধুনিক দক্ষতা–ভিত্তিক প্রণালির সঙ্গে যুক্ত করার এই উদ্যোগ তাই দীর্ঘমেয়াদে দেশকে নতুন পথ দেখাতে পারে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)