• শীতেও আগুন আনাজ, কিনতে গিয়ে ছেঁকা খাচ্ছেন ক্রেতারা
    এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: শীতের বাজারে দেখা মিলছে হরেক রকম আনাজেরও। চাষি ও ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, জোগানও মন্দ নয়। কিন্তু তার পরেও আনাজ কিনতে গিয়ে ছেঁকা খাচ্ছেন ক্রেতারা। তাঁদের দাবি, দাম নিয়ন্ত্রণের নজরদারি চালাক টাস্কফোর্স। আনাজে ছেঁকা-ছবিটা দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামেও একই রকম! পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে বিপুল চাষ হয় আনাজের। গ্রীষ্মকালীন আনাজের চাষ এ বছর খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু জুন থেকে টানা বৃষ্টির জেরে এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছিল উৎপাদন। বৃষ্টি কমতে শীতকালীন আনাজ চাষ শুরু করেন চাষিরা। কিন্তু বাজারে কোনও আনাজের দরই ৮০ টাকার নীচে নয়।

    শীতের অন্যতম আনাজ ফুলকপি। একটু বড় মাপের কপি কিনতে গেলে দাম দিতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। ঝাড়গ্রামে ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়ার আনাজচাষি গুরুপদ জানা বলেন, 'পটল, কুঁদরি, বেগুনের পুরোনো গাছ কেটে নতুন চারা বসানো হয়েছে। বেশিরভাগ জমিতেই ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হচ্ছে। আগে বাজারে যতখানি পটল, কুঁদরি, বেগুন-সহ অন্য আনাজ নিয়ে যেতাম, তা এখন একেবারেই নেই। কেবল ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে যাচ্ছি।'

    দাম বাড়ায় লাভের অঙ্ক কমেছে আনাজ ব্যবসায়ীদেরও। পাঁশকুড়ার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা গ্রামের আনাজ ব্যবসায়ী সরস্বতী দাসের অভিযোগ তেমনই। ঝাড়গ্রাম শহরের আনাজ বিক্রেতা সুবোধ মাহাতো বলেন, 'আনাজের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও কমেছে। যাঁরা ৫০০ গ্রাম আনাজ নিতেন, এখন তাঁরা আড়াইশো, তিনশো গ্রাম করে নিচ্ছেন।'

    মেপে বাজার করতে বাধ্য হচ্ছেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা জয়দেব গিরি, কোলাঘাটের বাসিন্দা অসীম দাসরা। অসীমের কথায়, 'শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আনাজের দামও। বছরের এই সময়টা ছাড়া এ সব আনাজ মেলে না। কিন্তু এত দাম হলে সাধারণ মানুষ তা কিনবেন কী করে?'

    চড়া দামের জন্য অনেকে ফড়েদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন। তাঁদের দাবি, চাষির হাত থেকে ক্রেতাদের হাত পর্যন্ত আনাজ পৌঁছনোর মাঝে থাকা মিডলম্যানরাই কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছেন। ফলে দাম বাড়ছেই। আনাজ-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতি জেলায় রয়েছে টাস্ক ফোর্স। অভিযোগ, জেলার কোথাও তাদের নজরদারি নেই। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, 'এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আনাজের কালোবাজারি শুরু করায় দাম এত বেশি। টাস্ক ফোর্স নজরদারি চালালে এমনটা হতো না।'

    এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, 'দেরিতে বর্ষা এসেছে। তাই শীতের আনাজের উৎপাদনও শুরু হয়েছে দেরিতে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। তাই দাম বেড়েছে। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে, প্রয়োজনে নজরদারি চালাবে টাস্ক ফোর্স।' ঝাড়গ্রাম কৃষি বিপণন দপ্তরেরও মার্কেটিং অফিসার শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, 'আনাজের উৎপাদন কম। সেই কারণেই দাম বেশি।' তবে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে রেগুলেটেড মার্কেটিং কমিটিকে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ইউনুস রিশিন ইসমাইল।

  • Link to this news (এই সময়)