• বনগাঁয় ফিরল দুষ্কৃতী তাণ্ডবের স্মৃতি, গোপাল ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলারদের বাড়িতে হামলা
    এই সময় | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, বনগাঁ: চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে আরও জটিল হলো বনগাঁর পরিস্থিতি। গোপাল শেঠের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সই না করা ৯ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ৬ মহিলা কাউন্সিলারের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বুধবার রাতে চাঞ্চল্য ছড়াল বনগাঁয়। কয়েকজন কাউন্সিলারের বাড়ি লক্ষ করে গুলি ও বোমা চলেছে বলেই অভিযোগ।

    বুধবার রাতের এই হামলা বনগাঁ শহরে অতীতের দুষ্কৃতী তাণ্ডবের স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে বলেই মত শহরের বাসিন্দাদের। এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। দুষ্কৃতী তাণ্ডবের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বনগাঁ থানার সামনে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করেন ৬ মহিলা কাউন্সিলার সহ তৃণমূলের কর্মীরা।

    বুধবার জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের ডাকা বৈঠকে ১৫ জন কাউন্সিলার হাজির ছিলেন। এর মধ্যে ৯ জন অনাস্থার আবেদনে সই করেন। বাকি ৬ মহিলা কাউন্সিলার অনাস্থার প্রতিবাদ করে সই না করে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা সকলেই বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠের ঘনিষ্ঠ। অনাস্থা বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরেই গোপাল ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কাউন্সিলারদের বাড়িতে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে আতঙ্কে রয়েছেন মহিলা কাউন্সিলার থেকে বনগাঁর সাধারণ মানুষও।

    বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে গোপাল শেঠকে গত ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিল দল। দু’দিন পর সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে গোপালকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠিও পাঠান বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব। তবে তার আগেই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নেন গোপাল। এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার দুপুরে কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। তখনই ৬ মহিলা কাউন্সিলার অনাস্থার প্রতিবাদ করে বৈঠক ছাড়েন।

    বুধবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শিখা ঘোষের বাড়িতে হামলা হয়। তাঁর স্বামী রাজু ঘোষ ওই ওয়ার্ডের তৃণমূলের সভাপতি। দু’জনেই গোপালের ঘনিষ্ঠ। হঠাৎই একদল দুষ্কৃতী কাউন্সিলারের বাড়িতে চড়াও হয়ে রাজুর নাম করে গালিগালাজ শুরু করে বলেই অভিযোগ। ইটের আঘাতে বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়। এর পর একে একে গভীর রাত পর্যন্ত ৯, ১, ১৯, ১১ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের বাড়িতেও চড়াও হয়ে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা।

    গোপাল শেঠের সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন অর্ঘ্য হালদার ওরফে রাজা। গোপাল ছুটি নেওয়ার পর থেকে হুমকির জেরে রাজাও বাড়িছাড়া। দুষ্কৃতীরা রাজার বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শর্মিলা দাস বৈরাগীর বাড়ি লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলিও চালিয়েছে বলে অভিযোগ। গুলি লাগে বাড়ির দরজায়। ১১ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শম্পা মোহান্ত এবং শর্মিলা দাসের বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে বলেই অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

    এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটায় ৬ কাউন্সিলার–সহ তৃণমূল কর্মীরা দোষীদের গ্রেপ্তারির দাবিতে বনগাঁ থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানে হাজির হন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতাবালা ঠাকুর। পরে তিনি পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করেন। পুলিশের আশ্বাসের পর বেলা আড়াইটায় অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়। মমতাবালা বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিপক্ষে অবস্থার জন্য ৬ কাউন্সিলারকে চাপ দেওয়া হয়েছিল বৈঠকে। তাঁরা প্রতিবাদ করায় হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অনাস্থা বৈঠক সম্পর্কে আমাকে কিছু বলা হয়নি। বনগাঁয় পুলিশের ভূমিকা বলতে কিছু নেই।’ বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।’

    কাউন্সিলার শিখা ঘোষ বলেন, ‘আমি অনাস্থার বিপক্ষে। বৈঠকেও এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সে কারণে রাতে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।’ আর এক কাউন্সিলার দীপালি বিশ্বাস বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরাই যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেই বনগাঁ শহরের মানুষকে আমরা কী ভাবে নিরাপত্তা দেব।’

  • Link to this news (এই সময়)