মৃত দুই বিএলও-র পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা নবান্নর
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ নভেম্বর ২০২৫
রাজ্যে এসআইআর চালু হওয়ার পর থেকে একের পর এক আতঙ্কে মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসছিল। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, এসআইআরের কাজের চাপে দু’জন বিএলও প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে দুই বুথ লেভেল অফিসারের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। পাশাপাশি কোন্নগরের কর্তব্যরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে সেরিব্রাল অ্যাটাক হওয়া এক কর্মীকেও দেওয়া হবে ১ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য। রাজ্য প্রশাসনের মতে, মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মীদের সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। তাই দ্রুত সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
কিছুদিন আগে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয় বিএলও নমিতা হাঁসদার। তিনি মেমারির চক বলরামপুরে ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও ছিলেন। সেই সঙ্গে অঙ্গনওয়ারির কর্মীও ছিলেন। এনুমারেশন ফর্ম বাড়ি বাড়ি বিলি করার সময়ই ব্রেন স্ট্রোক হয় বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
অন্যদিকে মৃত্যু হয়েছে জলপাইগুড়ির অন্য এক বিএলও-র। তিনিও অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী ছিলেন। মৃত বিএলও–র নাম শান্তিমুনি ওঁরাও। ডুয়ার্সের মাল ব্লকের নিউ গ্লেনকো চা বাগান এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এসআইআর প্রক্রিয়ায় রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০/১০১ নম্বর বুথের বিএলও–র দায়িত্ব পান তিনি। ১৮ নভেম্বর রাতে অন্যান্য দিনের মতো খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যান শান্তিমুনি। বুধবার ভোরে বাড়ির সংলগ্ন একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। কাজের চাপেই আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কোন্নগরের বুথ লেভেল অফিসার তপতী বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আপাতত সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।বুধবার কোন্নগর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করছিলেন তপতী। আচমকাই অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তপতী কোন্নগর নবগ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। চিকিৎসাধীন ওই কর্মীর পরিবারকে ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। নবান্ন সূত্রে খবর, চিকিৎসার ব্যয় ও পারিবারিক সঙ্কট বিবেচনা করেই দ্রুত সাহায্যের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবারগুলির শোক ও অনিশ্চয়তার মাঝে সরকারি সহায়তা অন্তত প্রাথমিক ভরসা দেবে বলে মনে করছে প্রশাসন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিএলও-দের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী মেশিনারি হিসেবে সামনের সারির দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা। কাজের চাপ ও এলাকাভেদে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সবসময় থাকে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতি নবান্নের এই ঘোষণা কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, বিএলও-দের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসা-সহ বেশ কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবিও করা হচ্ছে।