জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শীতের শিরশিরানি এখনো জাঁকিয়ে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু বড়দিনের মেজাজটা যেন আচমকাই আছড়ে পড়ল এনআইপিএস (NIPS) ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্টের ক্যাম্পাসে। তবে এবারের কেক মিক্সিং আর পাঁচটা সাধারণ অনুষ্ঠানের মতো ছিল না; যা ঘটল, তাকে এককথায় বলা চলে—ইতিহাস।
ভাবুন তো একবার, ভারতের তাবড় সব ‘সেলিব্রিটি শেফ’—যাঁদের হাতের জাদুতে মুগ্ধ গোটা দেশ, যাঁদের রেসিপি বা টিপস পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে ভোজনরসিকরা—তাঁরা সবাই এক ছাদের তলায়! আইএফসিএ (IFCA) থেকে এসআইসিএ (SICA), আইসিএফ (ICF), রয়্যাল রাজস্থান শেফ সোসাইটি, আর ঘরের কাছের ইস্টার্ন ইন্ডিয়া কুলিনারি অ্যাসোসিয়েশন—কে নেই সেখানে? ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের রন্ধনশিল্পের নক্ষত্ররা যখন এনআইপিএস-এর গেট দিয়ে একসাথে প্রবেশ করলেন, ক্যাম্পাসের বাতাস যেন মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল। এ দৃশ্য বিরল, এ দৃশ্য এক কথায় রাজকীয়।
তারকাদের মেলা, ছাত্রদের খেলা
শেফ বিজয় ভাস্করণ, শেফ সীতারাম প্রসাদ, শেফ কাশী বিশ্বনাথন, শেফ বিবেক কদম, শেফ বিমল ধর, শেফ পরবিন্দর বালি এবং শেফ ভারত আলাঘ—নামগুলো শুনলেই সম্ভ্রম জাগে। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন শেফ অভিরু বিশ্বাসের নেতৃত্বে ইআইসিএ (EICA)-এর পুরো টিম—শেফ সন্দীপ পান্ডে, রঙ্গনাথ মুখার্জি, শান্তনু গাইন, রাম চন্দর, কৃতিকা বসু গুহ, জোয়েল বসুমাতারি, দেবজিৎ মজুমদার এবং শেফ ক্লাইভ।
তবে এই বিশাল যজ্ঞের নেপথ্য নায়ক কারা জানেন? ছাত্রছাত্রীরা! সাজসজ্জা থেকে শুরু করে লাইভ ক্যারল গান—পুরো ক্যাম্পাসটাকে এক মায়াবী উৎসবের চেহারা দিয়েছিল ওরাই। অতিথিদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোয় ছিল না কোনো ত্রুটি, বরং ছিল পেশাদারিত্বের এক অনন্য ছাপ।
যখন মশলায় মিশল অভিজ্ঞতা
আসল জাদুটা শুরু হলো মিক্সিং টেবিলের চারপাশে। একদিকে কিংবদন্তি সব শেফ, আর তাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে আগামীর শেফরা। শুকনো ফল, মশলা আর নানাবিধ উপকরণের গন্ধে যখন চারপাশ ম-ম করছে, তখন তৈরি হলো এক অদ্ভুত সুন্দর মুহূর্ত। এটা শুধু কেক মিক্সিং ছিল না, ছিল এক হাতে-কলমে শিক্ষার ক্লাস। ছাত্ররা দেখল, শিখল এবং বুঝল—কীভাবে ঐতিহ্যের সাথে মিশিয়ে দিতে হয় আধুনিকতা আর শৃঙ্খলা।
শেফরা ছাত্রদের সাথে মিশে গেলেন একেবারে বন্ধুর মতো। চলল গল্প, টিপস দেওয়া-নেওয়া আর অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান। শেফ অভিরু বিশ্বাস মুগ্ধ হয়ে বললেন, “ঐতিহ্য আর পেশাদারিত্বের এমন নিখুঁত মেলবন্ধন সচরাচর দেখা যায় না।”
শিক্ষাঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়
শেফ বিজয় ভাস্করণ থেকে শুরু করে শেফ পরবিন্দর সিং বালি—সকলেই একবাক্যে স্বীকার করলেন এনআইপিএস-এর এই উদ্যোগের কথা। শেফ সীতারাম তো বলেই ফেললেন, “একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে এত বড় মাপের আয়োজন সত্যিই অসাধারণ।”
কলকাতার বুকে হসপিটালিটি শিক্ষার ক্ষেত্রে এই দিনটি যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই। এনআইপিএস দেখিয়ে দিল, পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে বেরিয়ে এসে কীভাব ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি শিল্পের জাদুকরদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। কেকের সুগন্ধ হয়তো বড়দিন পেরোলেই মিলিয়ে যাবে, কিন্তু এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের রেশ থেকে যাবে বহুদিন।