• নজরে ১০-২৫ হাজারে হারা আসন, বিজেপির ম্যাপিংয়ে ১২৩
    প্রতিদিন | ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: এসআইআর (SIR in West Bengal) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলার ১২৩টি বিধানসভাকে টার্গেট করে গোপন অভিযানে নেমেছে বিজেপি। মূলত ১০ থেকে ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে হারা আসনগুলিকে চিহ্নিত করে ‘ম্যাপিং’ করছে পদ্ম শিবির। এর মধ্যে কলকাতার তিনটি, হাওড়ার ছয়টি, হুগলি ও নদিয়া জেলার পাঁচ থেকে সাতটি করে আসনকে টার্গেট করে নির্বাচন কমিশনের একাংশকে ব্যবহার করে নেমে পড়েছেন গেরুয়া সেনাপতিরা।

    সূত্রের দাবি, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, বর্ধমান পূর্ব ও পশ্চিম জেলায় রেকর্ড সংখ্যক সিট ম্যাপিং করে বুথভিত্তিক বিপুল সংখ্যায় ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার গোপন ছক কষেছে বঙ্গ বিজেপি। অবশ্য সংখ্যালঘু এবং তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটির এলাকাগুলি এই তালিকা থেকে বাদ দিয়েই নির্বাচন কমিশনের একাংশকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সন্তর্পণে অভিযানে নেমে পড়েছে বিজেপির ভোট কুশলীরা। বিজেপির এই গোপন টার্গেট কতটা পূরণ হয়েছে তা বোঝা যাবে ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার লিস্ট প্রকাশ হলেই। যদিও বাদ পড়া ভোটাররা পরের এক মাসে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে ওই আবেদনকারীদের নাম না তুলতে দেওয়ার গোপন ছক কষেছে বিজেপি।

    সূত্রের খবর, এই গোপন অভিযানে বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বিজেপির একটা ‘স্পেশাল টিম’-কে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই টিমের সঙ্গে দিল্লির অফিসারদের একাংশের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ থাকছে। কমিশনের নিজস্ব ম্যাপিংয়ের পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পৃথক ম্যাপিং চলছে ওই নির্দিষ্ট আসনগুলিতে। প্রতিদিনই কলকাতা থেকে এসআইআর-এর অগ্রগতির গোপন রিপোর্ট এবং লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ করা হচ্ছে, সেই তথ্য দিল্লিতে ওই অফিসারদের হাতে চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের এই ১২৩টি চিহ্নিত ‘মার্জিনাল সিট’ থেকে মোটামুটি ১ কোটি ১৫ লক্ষ পুরনো ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার টার্গেট নিয়েছে পদ্ম শিবির। যদিও তৃণমূল শিবিরের পালটা দাবি, ‘রাজ্যের প্রায় ৮৫ হাজার বুথেই আমাদের সংগঠনের কর্মীরা বিএলও-দের উপর কড়া নজর রেখেছে। এসআইআর-এ বিজেপি ৩০ শতাংশ বুথেও বিএলএ দিতে পারেনি, তাই কোনও ম্যাপিং কাজে লাগাতে পারবে না। আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ২৫০-এর বেশি আসন পাবে।’

    চঞ্চল্যকর তথ্য হল, অধিকাংশ জেলাতেই ইতিমধ্যে পাঁচ থেকে সাড়ে আট হাজার পর্যন্ত মৃত ভোটারের সন্ধান মিলেছে। বৃহস্পতিবার মালদহ জেলায় এসআইআর-এর কাজ দেখে সন্তুষ্ট জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের টিমে থাকা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন, “শুধুমাত্র মালদহ জেলার ১২টি বিধানসভা এলাকায় ৭১৭১ ভোটারের সন্ধান মেলেনি।” আর প্রশ্ন এখানেই, মাত্র ১৫ দিন এসআইআর-এর কাজ চলার পরেই যদি সাত হাজারের বেশি ভোটার উধাও হয়, তাহলে ৯ ডিসেম্বরের পর কত নাম বাদ দিয়ে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে? এর পিছনে কি বিজেপির ওই ১২৩-এর টার্গেট?
    এসআইআর প্রক্রিয়া সামনে রেখে শুধুমাত্র মৃত বা ‘শিফটেড’ ভোটার বাদ দেওয়া নয়, অভিযোগ বৈধ তৃণমূল সমর্থক ভোটারদের বাদ দিয়ে দলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য একগুচ্ছ কৌশল সাজিয়েছে বিজেপি। বস্তুত, এই কারণেই ১২৩টি আসনকে তিনটি স্তরে ভাগ করেছে পদ্ম শিবির। এগুলি হল- ১) পাঁচ থেকে ১০ হাজারে হারা আসন, ২) ১০ থেকে ২০ হাজার এবং ৩) ২৫ হাজারের আশপাশে তৃণমূলের কাছে পরাজিত আসনগুলি। এক্ষেত্রে পার্টির নিজস্ব সার্ভে রিপোর্টের পাশাপাশি আরএসএসের মতো একাধিক সংগঠনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে বলেও বিজেপি সূত্রে খবর। তবে বিগত নির্বাচনগুলির অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে দলীয় সংগঠনের করুণ অবস্থা উপলব্ধি করেই শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের উপরেই ভরসা রাখছে বিজেপি। আর সেক্ষেত্রে এসআইআর প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে আসন্ন ভোটে বৈধ ১ কোটির বেশি ভোটারকে বাদ দিয়ে পদ্মের জয়ের পথ সুগম করতে গোপন অ্যাজেন্ডা নিয়েছে কমিশনের অফিসারদের একাংশ।

    মতুয়া, রাজবংশী ও জঙ্গলমহলের আদিবাসী প্রধান এলাকার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের একটা বড় সংখ্যক আসনকেও এই ১২৩টি সিটের তালিকায় রেখেছে বঙ্গ বিজেপি। যদিও গেরুয়া শিবির স্বীকার করে নিয়েছে, গতবার জিতেছে এমন ২০-২২টি আসনের বিজেপি বিধায়করা এবার আর জিতে বিধানসভায় ফিরতে পারবেন না। মূলত এলাকার সঙ্গে জনসংযোগ না থাকার পাশাপাশি তৃণমূল গত পাঁচ বছরে ওই এলাকায় নিজস্ব সংগঠন অনেক শক্তিশালী করে নিয়েছে। স্বভাবতই এখন পদ্মশিবিরে থাকা ৬০ বিধায়কের মধ্যে ২০ জন হারলেও বাকিদের সঙ্গে নিয়ে ১২৩ টার্গেট সিট জিতে নিজেদের স্বপ্নপূরণের ছক কষেছে বঙ্গ বিজেপি। যদিও বিজেপির এমন গোপন ছককে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, বিহারে বিরোধীদের সংগঠনহীনতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে। বাংলায় টিভি ও সোশাল মিডিয়ায় দাপট দেখানো বিজেপির সঙ্গে সাধারণ ভোটারদের কোনও সম্পর্ক নেই। আর একজন বৈধ ভোটার বাদ গেলে তৃণমূল যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)