অয়ন শর্মা: সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তার সুপারভাইজার অবনী আচার্য, মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দেওয়া চলছে। শ্লীলতাহানি, কুকথা, বিভিন্ন নোংরা প্রস্তাব দিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীদের। রাতে শোওয়ার প্রস্তাব থেকে, শয্যায় সন্তুষ্টি করার মতো প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের এমন ভয় দেখানো হয়েছে, এই প্রস্তাবে রাজি না হলে, ওই সমস্ত মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের চাকরি চলে যাবে। অবনী আচার্য এতটাই প্রভাবশালী যে, তিনি কারও কিছু তোয়াক্কা করতেন না এবং ভয় দেখাতেন, ওর নামে অভিযোগ করলেও কিছু হবে না। যবে থেকে উনি এসেছেন, মেয়েদের রাতে ডাক পড়ত। রাজি না হলে কাজে ৬ মাস-৮ মাস বসিয়ে রাখা হত। থানায় জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও চিঠি লিখেছেন তারা, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। MSVP-কে জানালো হলেও কেউ কোনও পদক্ষেপ নেননি।
ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, উঠেছে রোগী নিরাপত্তা নিয়েও। কিন্তু সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে এক অনন্য নজির গড়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। নিরারত্তার দায়িত্ব যার হাতে, তিনিই রাত হলেই পশু হয়ে ওঠন। অর্থাত্ রক্ষকই ভক্ষক। এর আগে পাঁশকুড়ার হাসপাতালে এরকম ঘটনা ঘটেছিল।
অবনী আচার্য, নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান, অল্প বয়সী মেয়েদের টার্গেট করতেন। রাতের সাথীতে ২০-২২-২৪ বছর মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে অশালীন স্পর্শ করতেন। লিফটের কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে বারবার শ্লীলতাহানি করেছে। এখন কিছুদিন হল ওই অভিযুক্রের ঘরে ক্যামেরা বসেছে, কিন্তু বারবার অফিসে জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি।
এর আগে জানুয়ারিতে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এক প্রসূতির মৃত্যু ও চার প্রসূতির গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার নেপথ্যে অভিযোগ উঠেছিল নিকৃষ্ট মানের রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের দিকে। ঠিক তার চার মাসের মাথায় এ বার প্রায় একই ঘটনা ঘটল কামারহাটির কলেজ অফ মেডিসিন তথা সাগর দত্ত হাসপাতালে।
রাতে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে ফের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরে। রবি ও সোমবারে সিজ়ারের পরে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার জেরে ১১ জন প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে আইসিইউ–তে স্থানান্তর করতে হয় নিমতার পম্পা সরকারকে (৩৫)। ওই দিন রাতে মারা যান তিনি।
এতবড় বিপত্তির নেপথ্যে সন্দেহের তির অ্যামিকাসিন নামে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশনের দিকে। ঝুঁকি না নিয়ে তাই বাতিল করা হয়েছে অ্যামিকাসিনের পুরো ব্যাচের ওষুধ–ই। উপাধ্যক্ষ তথা সুপার সুজয় মিস্ত্রির নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে সাত সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিও। যদিও পম্পার দেহের ময়নাতদন্ত কেন করা হলো না, সে প্রশ্নও তুলেছে চিকিৎসকদের একাংশ।