বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ফের অশান্ত নেপাল। বৃহস্পতিবার জেনজির সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির দলের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। আর তাতেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে প্রতিবেশী দেশ৷ ঘটনার জেরে ভারত-নেপাল সীমান্তে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত স্বাভাবিক থাকলেও চলছে তল্লাশি। নেপালে অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে বিভিন্ন অপরাধী চক্র, চোরাকারবারি ও জঙ্গি সংগঠন। শিলিগুড়ি করিডর অর্থাৎ ‘চিকেনস নেক’-এ সমস্যা বাড়তে পারে। ওই আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকা যেমন নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। একইভাবে বাড়ানো হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নজরদারি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে লস্কর জঙ্গি আবদুল করিম টুন্ডাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতে অন্তত ৪০টি বোমা হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল ওই জঙ্গি। একই বছরে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন ভাটকলকে গ্রেপ্তার করে নেপাল পুলিশ। ভারতে জালনোট ঢোকাতে পাকিস্তান এই নেপাল রুট ব্যবহার করেছে। একসময় এই রুটে নেপালে ঢুকে আত্মগোপন করেছে কেএলও, আলফা জঙ্গিরা। পাকিস্তানের আইএসআই নেপাল হয়ে ভারতে জঙ্গিদের ঢোকানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি দিল্লির লালকেল্লায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর আশঙ্কা বেড়েছে জঙ্গিরা নেপালে অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। ওই কারণে চিকেনস নেকের নিরাপত্তা জোরদার করতে বৃহস্পতিবার থেকেই নেপাল সীমান্তে কড়া নজরদারি চলছে। দার্জিলিং পাহাড়ের সান্দাকফু পর্যন্ত ভারত-নেপাল সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে সিআইএসএফ, র্যাফ। পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে সীমান্ত সুরক্ষা বলের (এসএসবি) সঙ্গে টহল দিচ্ছে র্যাফ, সিআইএসএফ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপাল ও ভারতের মধ্যে ১,৭৫১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। ভারতের উত্তরাখণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্য নেপাল সংলগ্ন। সেখানেই রয়েছে বিরাটনগর, রক্সৌল, পানিট্যাঙ্কি-কাঁকরভিটা, ভৈরবা এবং যোগবানী সীমান্ত। ওই সীমান্ত এলাকায় ২৬টি বাণিজ্য রুট, ১৫টি ট্রাফিক রুট এবং ১৭টি চেকপোস্ট রয়েছে। ভারত-নেপাল সীমান্ত উন্মুক্ত। সেখানে কাটাতারের বেড়া নেই। অবাধ যাতায়াত। স্বভাবতই জোরদার তল্লাশি চলছে। ভারতে প্রবেশকারীদের পরিচয়পত্র খুটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বুধবার থেকে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন নেপালের সিমারাচক এলাকা উত্তপ্ত। অভিযোগ, এখানে পুলিশের সঙ্গে জেনজির সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায়৷ এছাড়া শূন্যে গুলি ছোড়ে। বিক্ষুব্ধরা নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে৷ এতে ছ’জন পুলিশ আধিকারিক আহত হন। সিমারা বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় কার্ফু জারি করে প্রশাসন। বৃহস্পতিবারও রাস্তায় নামে তরুণরা। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়ানো হয় কার্ফুর মেয়াদ। নেপালের ঘটনার রেশ যেন চিকেনস নেক এলাকায় না-পড়ে সেজন্য আগেভাগেই সতর্ক হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা, এসএসবি।