কলকাতা মেডিক্যালে ছাত্রীদের অশালীন স্পর্শ! বিতর্কের মুখে পদত্যাগ অধ্যাপকের
প্রতিদিন | ২২ নভেম্বর ২০২৫
অভিরূপ বিশ্বাস: ছাত্রীদেরকে অশোভনভাবে স্পর্শের অভিযোগ সামনে আসতে নিজেই পদত্যাগ করেছেন মেডিক্যাল কলেজে অ্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রবীণ অভিজ্ঞ অধ্যাপক। নিজে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। কখনও কোনও ছাত্রীকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়।’’
পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করে অ্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিজেই জানিয়েছেন, ‘‘এই বিষয়ে তদন্ত হোক। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি সাময়িকভাবে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চাই।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সে চিঠি গ্রহণ করেছে। দ্রুত সে জায়গায় অধ্যাপক ডা. মৈত্রেয়ী মণ্ডলকে অ্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। স্টুডেন্ট ইউনিয়নের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তৈরি করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। আগামী দশ দিনের মধ্যে সেই তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন পাঁচজন অধ্যাপক। দু’জন ছাত্র। অধ্যাপকদের মধ্যে রয়েছেন ডা. সৌমিত্র ঘোষ, ডা. অরূপ চক্রবর্তী প্রমুখ।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, “ছাত্র ইউনিয়নের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হওয়া উচিত। তার জন্য সাত সদস্যর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে সম্পূর্ণ বিষয়টি জানা যাবে। ভবিষ্যতে অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সদা সতর্ক।”
উল্লেখ্য, মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন যে অভিযোগ করেছে, তাতে নির্দিষ্ট কোনও একজন ছাত্রী এই অভিযোগ করেননি। উল্লেখ নেই কোনও বিশেষ দিনেরও। স্বাভাবিকভাবে পুলিশের কাছেও কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন সূত্রে খবর, প্রথমে মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী উত্থাপন করেছে অনভিপ্রেত স্পর্শের বিষয়টি। ছাত্রীর অভিযোগ, ক্লাসের ভিতরে ও বাইরে একাধিকবার অশোভনভাবে স্পর্শ করেছেন অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক। যদিও সেই ছাত্রীর পরিচয় প্রকাশ্যে আনেনি মেডিক্যাল কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। ‘তথ্যহীন’ সে অভিযোগে মেডিক্যাল কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন জানিয়েছে, এর আগের একাধিক ব্যাচগুলিতে এমন অভিযোগ এসেছে। প্রতি বছরই প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন। তবে প্রবীণ অধ্যাপকরা অনেকেই জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি ভাসা, ভাসা। নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব। যদিও স্টুডেন্ট ইউনিয়নের দাবি, চলতি বছরে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকে এমন অভিযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, সমস্যা হলে পিছনের বেঞ্চে বসো। তাহলে অ্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দৃষ্টি এড়ানো যাবে। সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকেও ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন। শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজে মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে। সাম্প্রতিক অতীতে এমন স্লোগান শোনা গিয়েছিল আর জি কর কাণ্ডের পর মিছিলে-মিটিংয়ে।