• রাজ্যের আপত্তি উড়িয়েই দেশে চালু চার শ্রম কোড
    বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: শুক্রবার থেকে সারা দেশে চার শ্রম কোড আইনে পরিণত করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য এদিন নিজেই এই ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, তা করতে গিয়ে আইন কার্যকরের ‘আইন’ই মানল না মোদি সরকার। কারণ শ্রম কোড আইন হিসেবে কার্যকর হতে হলে আগে দেশের সবক’টি রাজ্যের সঙ্গে এই ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক রাজ্য আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে সহমতি না দিলে তা চালু করাই যায় না। ঘটনা হল, চার শ্রম কোড নিয়ে প্রথম থেকেই তীব্র আপত্তি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। এমনকি সবক’টি লেবার কোডে তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গেও ঐকমত্য হয়নি কেন্দ্রের। ফলে নিয়মমতো এই চার শ্রম কোড আইনে পরিণত করতেই পারে না মোদি সরকার। 

    ইতিমধ্যেই এর তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই এই চারটি শ্রম কোডের বিরোধিতা করে আসছেন। রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও জবরদস্তি শ্রম কোড আইনে পরিণত করা হয়েছে। তাছাড়া সব রাজ্যই যে এই ব্যাপারে সহমত হয়েছে, তাও নয়। কেন্দ্র আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো মানতেই চায়নি। এর তীব্র বিরোধিতা করেছে সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চার শ্রম কোডকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। নতুন চার শ্রম আইন অবিলম্বে বাতিল করা না হলে বড়সড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। তবে প্রত্যাশিতভাবেই কেন্দ্রের এহেন পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে সংঘের শ্রমিক শাখা বিএমএস। 

    যে চার শ্রম কোড শুক্রবার থেকে আইনে পরিণত হয়েছে, সেগুলি হল ‘কোড অন ওয়েজেস, ২০১৯’, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড, ২০২০’, ‘কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি, ২০২০’, ‘অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড, ২০২০’। দেশের মোট ২৯টি শ্রম আইনকে একত্রিত করেই এই চারটি লেবার কোড ল’য়ে পরিণত হল। অর্থাৎ, শুক্রবার থেকে ওই ২৯টি শ্রম আইনের আলাদা করে কোনও অস্তিত্ব আর রইলো না। 

    শ্রমমন্ত্রক এদিন ঘোষণা করেছে, এর ফলে যেকোনও শ্রমিক-কর্মচারীকে নিয়োগপত্র দিতে বাধ্য থাকবে সংস্থা-প্রতিষ্ঠানগুলি। পাশাপাশি কোনও শ্রমিক-কর্মচারীকে ন্যূনতম মজুরির থেকে কম বেতন দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে তা আইন লঙ্ঘন হিসেবেই বিবেচিত হবে। ৪০ বছর এবং তদূর্ধ্বে যেকোনও শ্রমিক-কর্মচারীর বিনামূল্যে বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতেই হবে মালিকপক্ষকে। বেতন দিতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। মহিলা কর্মীরা চাইলে নাইট শিফটে তাঁদের দিয়ে কাজ করাতে হবে সংস্থা কর্তৃপক্ষকে। এক্ষেত্রে মহিলা কর্মীদের সম্মতির পাশাপাশি তাঁদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বন্দোবস্ত করতে বাধ্য থাকবে মালিকপক্ষ। ফিক্সড টার্ম কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার এক বছর পর থেকে নিশ্চিত গ্র্যাচুইটি, ওভারটাইমের মজুরি হবে দ্বিগুণ।
  • Link to this news (বর্তমান)