ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: এসআইআর নিয়ে ব্যস্ততায় হচ্ছে না ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প। আর এরই জেরে কার্যত ‘রক্ত-শূন্য’ জলপাইগুড়ি মেডিকেলের ব্লাডব্যাংক। একই গ্রুপের ডোনার জোগাড় করে আনতে না পারলে মিলছে না রক্ত। কার্ডের বিনিময়ে রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চরম দুর্ভোগে রোগীর পরিজনরা। ব্লাডব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে রক্তের জন্য কেউ হাউ হাউ করে কাঁদছেন। কেউ আবার রোগীকে বাঁচাতে হন্যে হয়ে খুঁজছেন রক্তদাতা।
জলপাইগুড়ি মেডিকেলের ব্লাডব্যাংকের তথ্য বলছে, দিনে গড়ে ৭০ ইউনিট রক্তের দরকার হয়। এছাড়া থ্যালাসেমিয়া রোগী ও হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে প্রসবের সময় এবং কোথাও পথ দুর্ঘটনা ঘটলে রক্তের প্রয়োজন বাড়ে। কিন্তু অক্টোবরে সারা মাসে মাত্র ছ’টি রক্তদান শিবির হয়েছে। চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের সংখ্যা দু’টি। হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে প্রসবের সময় ঝুঁকি এড়াতে অন্তঃসত্ত্বার যে গ্রুপের রক্ত, তাঁর নিজের এলাকায় একই গ্রুপের পাঁচজন রক্তদাতাকে আগেভাগে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে। প্রসূতির রক্তের দরকার পড়লে যাতে ওই পাঁচজন হাসপাতালে এসে রক্ত দেন, সেব্যাপারে যাবতীয় বন্দোবস্ত সেরে রাখতে বলা হয়েছে আশাকর্মীদের। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য রক্তদাতাদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লিখে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জলপাইগুড়ি মেডিকেলের ব্লাডব্যাংকের ইনচার্জ ডাঃ অনিন্দ্যপ্রকাশ ঘোষ বলেন, রক্তের সঙ্কট চলছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, কেউ একই গ্রুপের ডোনার না নিয়ে এলে আমরা রক্ত দিতে পারছি না। কার্ডের বিনিময়ে রক্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সি রয়েছে এমন অন্তঃসত্ত্বাদের প্রসবের সময় ঝুঁকি এড়াতে আগে থেকে রক্তদাতা চিহ্নিত করে রাখতে বলা হয়েছে। এসআইআর নিয়ে ব্যস্ততার পাশাপাশি এখন ধান কাটার মরশুম চলায় বারবার আবেদন করার পরও রক্তদান শিবির হচ্ছে না বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও ব্লাডব্যাংকের কর্মীরা।
জলপাইগুড়ি মেডিকেলের সুপার ডাঃ কল্যাণ খাঁ বলেন, রক্তদান শিবির করার জন্য আমরা বারবার সবার কাছে আবেদন করছি। কিন্তু হচ্ছে কোথায়? গতমাসে মাত্র ৬টি ক্যাম্প হয়েছে। চলতি মাসে অনেক চেষ্টার পর দু’টি ক্যাম্প করা গিয়েছে। ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প না হলে রক্ত মিলবে কীভাবে!
শুক্রবার দুপুরে জলপাইগুড়ি মেডিকেলের ব্লাডব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন ময়নাগুড়ির সাপ্টিবাড়ির বাসিন্দা রোশনা বেগম। তাঁর আর্তি, আমার বউমা মরে যাচ্ছে। কেউ রক্ত দিয়ে বাঁচান। জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, বউমা অন্তঃসত্ত্বা ছিল। সাতমাসে গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি। বউমার ‘ও পজিটিভ’ রক্ত। চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন, বউমাকে রক্ত দিতে হবে। কিন্তু ব্লাডব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, বউমার যে গ্রুপের রক্ত, সেই গ্রুপের রক্তদাতা না নিয়ে এলে ব্লাড পাওয়া যাবে না। এখন কোথায় রক্তদাতা পাব, ভেবে পাচ্ছি না।