• ২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা রানাঘাটের বৃদ্ধা গঙ্গাবালা ‘মৃত’!
    বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে জন্ম। এখনও দিব্যি বেঁচে। বয়স ৯১ বছর। অতঃপর, ধরে নেওয়া যায় স্বাধীনতার পর থেকে তিনি সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের ভোটার। রানাঘাট শহরের সেই নবতিপর বৃদ্ধা গঙ্গাবালা কর্মকার এখন ভোটার তালিকায় ‘মৃত’! পড়েছেন আতান্তরে।  রাজ্যে এসআইআর লাগু হওয়ার পর থেকেই এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসছে। কারও নাম-ধাম ভাঁড়িয়ে অন্য কেউ ভোটার হয়ে গিয়েছেন। প্রকৃত ভোটারের নামে ফর্ম আসেনি। আবার গঙ্গাবালাদেবীর মতো অনেকেরই সন্ধান মিলছে যাঁরা জীবিত থেকেও ‘মৃত’। সব ক্ষেত্রেই ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পর নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ‘মৃত’ গণ্য হয়েছেন। 

    রানাঘাট শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গঙ্গাবালাদেবী। এসআইআরের ভিত্তিবর্ষ ২০০২ সালেই নন, তিনি রানাঘাট শহরের দীর্ঘ সাত দশকের ভোটার। শেষ লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। কিন্তু, তাঁর বাড়িতে আসেনি ইনিউমারেশন ফর্ম। ২০২৫ সালে সংশোধিত তালিকা প্রকাশের সময় কোনও এক ভূতুড়ে কারণে তাঁর নাম ‘ডিলিট’ করে দেওয়া হয়েছে। 

    অথচ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার নিরিখে ৮১ রানাঘাট পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের ১২৭ নম্বর অংশের বাসিন্দা গঙ্গাবালাদেবী। সেই তালিকার ১৭ নম্বর ক্রমিক সংখ্যায় তাঁর নাম রয়েছে। ভোটার আইডি নম্বর WB/12/081/375439। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের পোর্টাল বলছে, বর্তমানে এই কার্ডের কোনও অস্তিত্বই নেই। অর্থাৎ, কমিশনের তালিকায় একপ্রকার তিনি ‘মৃত’। ২০২৫ সালের তালিকায় নাম না থাকার কারণে আসেনি ফর্ম।  শুক্রবার বাড়িতে বসে গঙ্গাবালাদেবী বলছিলেন, ‘আমি তো প্রতিবার ভোট দিয়েছি। তাও কেন ওরা আমার নাম কেটে দিল? আমি আগের বছরও আমাদের বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছি।  পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই তো জানেন আমি বেঁচে আছি।’ আচমকা মায়ের নাম ভোটার তালিকা থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় হতবাক তাঁর ছেলে অরুণ কর্মকার। তাঁর কথায়, ‘আমার মা দিব্যি সুস্থ। কোনও শারীরিক সমস্যাই নেই। প্রতিবছর নিয়ম করে ভোট দেন। শুধু তাই নয়, আমরা এদেশীয়। বংশপরম্পরায় রানাঘাটের বাসিন্দ। কে বা কার আবেদনের ভিত্তিতে আমার মায়ের নাম ডিলিট হল কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আমাদের বিএলও খুব ভালো। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। আমরা তাঁর ভরসায় রয়েছি। তবে কিছুটা চিন্তা রয়েছে ফর্ম না আসার জন্য।’ 

    এদিকে, সম্প্রতি রানাঘাট এবং সংলগ্ন এলাকায় অন্তত হাফ ডজন এরকম উদাহরণ প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকা মানুষের নাম ভূতুড়ে কারণে ডিলিট হয়ে গিয়েছে ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা থেকে। অথচ, তাঁদের প্রত্যেকের নাম ২০০২ সালের তালিকায় ছিল। দু’ একটি বিশেষ ক্ষেত্রে এমন উদাহরণও নজরে এসেছে, যেখানে আসল ভোটারের নাম ভোটার কার্ডের নম্বর এমনকি সুপার ইম্পোজ করা ছবি ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ নিবাসী সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিয়ে মহকুমা নির্বাচনী দপ্তরের এক কর্তা বলেন, এই প্রত্যেকটি বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ চাইলে এগুলি নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ পাঠাতে পারেন। আমরা অবশ্যই তার সদুত্তর খোঁজার চেষ্টা করব। চিন্তার কোনও কারণ নেই। ২০০২ সালের তালিকায় নাম রয়েছে এবং বেঁচে থাকা যে কোনও ভোটারের সমস্যার সমাধান করা হবে নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে।
  • Link to this news (বর্তমান)