স্বামীরা ফিরে গিয়েছে বাংলাদেশে, এপারে আটকে অসহায় স্ত্রী-সন্তান
বর্তমান | ২২ নভেম্বর ২০২৫
শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: পুরুষরা আগেভাগেই বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন। মহিলারা আটকে ভারতে। কারও স্ত্রী, আবার কারও মা, কার্যত ‘বন্দি’ হয়ে রয়েছেন। সীমান্তের দু’পার এখন যেন দুই জগৎ। এক পাড়ে অপেক্ষা আর অনিশ্চয়তা। অন্যপাড়ে উদ্বেগ আর তাড়া। এই টানাপোড়েনে অসহায় অবস্থা মহিলাদের। যাঁরা গত কয়েকদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে দিনরাত কাটাচ্ছেন। দেশে ফেরার সুযোগ মিলবে, এই আশাতেই দিন গুণছেন। ওপার থেকে ফোনে ‘ঘরের ছেলেরা’ বলছে তাড়াতাড়ি এসো। পাল্টা এপার থেকে তিক্ত জবাব, আমাদের কষ্ট একবার এসে দেখে যাও!
এসআইআর আবর্তে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঘরে ফেরা হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিনই শয়ে শয়ে নারী, পুরুষ, শিশু স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্তে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা বেশি। পড়িমড়ি করে বাড়ি ফিরতে চাইছে সবাই। হাকিমপুর সীমান্তের ধুলোমাখা রাস্তায় বসে আছেন আকিলা খাতুন। দেড় বছরের বাচ্চা নিয়ে দু’দিন ধরে এখানে অপেক্ষা করছেন। তাঁর স্বামী রুহুল আমিন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে গিয়েছে দিনদশেক আগে। এসআইআর নিয়ে এপারে কড়াকড়ি শুরু হতে, আর সীমান্ত টপকানোর সাহস দেখায়নি। রুহুল-আকিলা থাকত রাজারহাটে। স্বামী ওপারে যাওয়ার পর একা সন্তানকে নিয়ে অপেক্ষা করছিল আকিলা। চট্টগ্রাম থেকে ঘনঘন ফোন আসছে। কিন্তু আকিলা জানে, স্বামীর কাছে যাওয়াটা কতটা কষ্টের। রয়েছে কাগজপত্র যাচাইয়ের জটিলতা। সীমান্তের কঠোর নিয়ম তাদের আটকে দিয়েছে এপাড়ে।
আকিলার পাশেই বসে সাতক্ষীরার রুমানা বিবি। কোলে এক বছর বয়সি মেয়ে। রুমানা সীমান্তে আটকে রয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি। খাবার শেষ, জল কম। কোলের মেয়েটা কেঁদেই চলেছে। ওপার থেকে ফোনে স্বামীর তাগাদা, তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। রুমানা তিক্ত হেসে বলেন, এপারে এখন কীভাবে দেশে ফেরার অপেক্ষা করছি, ও (স্বামী) কী করে বুঝবে! দালাল বলেছিল, মহিলা নিয়ে সীমান্ত পার হওয়া ঝুঁকির, তখন তাই আমার যাওয়া হয়নি। এখন বিএসএফ কখন পাঠাবে, তার অপেক্ষাতেই রয়েছি। একইভাবে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রোকেয়া বিবি,বাড়ি কুষ্ঠিয়ায়। স্বামী ওপারে পৌঁছে গিয়েছে। এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় হাকিমপুরের ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে’ পড়ে রয়েছে রোকেয়া। তার কথায়, আমি এপারে। দেশে ফেরার তাড়ায় বিস্তর ভিড়, তেমনই নিয়ম কানুনের ঝক্কি। উড়ে তো সীমান্ত পার হতে পারব না! স্বামী ফোন করলে এটাই বলছি। এমনই অসংখ্য অনুপ্রবেশকারী মহিলার যন্ত্রণাটা কিন্তু একই। কেউ এক রাত, কেউ আবার দুই রাতের বেশি সময় ধরে সীমান্তে বসে আছেন। শিশুদের কান্না, মায়েদের অস্থিরতা আর ফোনে বারবার চোখ। ভারতীয় সেজে থাকার দিন শেষ, এবার বাংলাদেশে যে ফিরতেই হবে!