• কয়লা পাচার মামলায় দিনভর ইডির হানা, কুকুরের ভয়ে দরজার বাইরে গোয়েন্দারা!
    এই সময় | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: কয়লা পাচার মামলায় ফের অ্যাকশন মোডে ইডি। শুক্রবার ভোর থেকে পশ্চিমবঙ্গ–ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে মোট ৪২টি ঠিকানায় একযোগে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। তবে ধানবাদের কয়লা ব্যবসায়ী লালবাবু সিং–এর বাড়ি ‘দেব ভিলা’-য় গিয়ে বিপাকে পড়েন তদন্তকারীরা। বাড়ির উঠোনে ছেড়ে রাখা সাতটি বিশাল সারমেয় দেখে থমকে যান গোয়েন্দারা। প্রায় এক ঘণ্টা গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার পরে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দরজা খোলা হয়।

    ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড থেকে কয়লা পাচারের মাধ্যমে বিপুল অর্থ বিভিন্ন চ্যানেলে ‘প্রোটেকশন মানি’ হিসেবে গিয়েছে একাধিক প্রভাবশালীর কাছে। সেই টাকা আবার পরবর্তীতে নানা ব্যবসায় লগ্নি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এ রাজ্য থেকে গয়না এবং নগদ মিলিয়ে আট কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কলকাতায় সল্টলেক, বাইপাস ছাড়াও আসানসোল, দুর্গাপুর, হাওড়া, পুরুলিয়া,পাণ্ডবেশ্বর সহ ২০টি জায়গায় ইডি তল্লাশি করে।

    ঝাড়খণ্ডে ২২ জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তারমধ্যে ধানবাদে ১৮টি ঠিকানায় হানা দেন গোয়েন্দারা। স্থানীয় ১২ জন কয়লা ব্যবসায়ীর বাড়ি ও কার্যালয়ে গিয়ে নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়। এদের অধিকাংশই ইসিএল–বিসিসিএলের আউটসোর্সিং প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। যাঁদের বাড়িতে এ দিন হানা দেওয়া হয় তাঁরা হলেন, বিনোদ মাহাতো, কুম্ভনাথ সিং, হেমন্ত গুপ্তা, গণেশ আগরওয়াল, দীপক পোদ্দার, এস কেশরি, অরবিন্দ সিং।

    এছাড়াও ধানবাদের ব্যবসায়ী অনিল গোয়েল ও সঞ্জয় খেমকার পুরোনো আবাসনে তল্লাশি চালানো হয়। এই দু’জনের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের পুরোনো মামলা রয়েছে। এই কয়লা ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল ও বিসিসিএলের একাধিক কয়লাখনি ঠিকায় নিয়ে কয়লা উত্তোলন করেন। যাকে বলা হয় ‘আউটসোর্সিং’।

    এই প্রথার নিয়ম হলো, ঠিকা সংস্থাটি কয়লা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাকে দেবে। ওই কয়লা বিক্রির দায়িত্ব তাদেরই। কিন্তু এই ঠিকা সংস্থাগুলি কয়লা উত্তোলনের পরে সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মদতে বিপুল পরিমাণ কয়লা অবৈধ পথে বিক্রি করে দিতেন।

    ২০২০ সালে সিবিআই কয়লা পাচারে অনুপ মাঝি নামে এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেই তদন্তে একাধিক প্রভাবশালী ও আইপিএসকে তলব করা হয়। তদন্তে কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাঁর ঘনিষ্ঠ নরেন্দ্র খারকর ওরফে নারানের নাম উঠে আসে। বর্ধমানের শক্তিগড়ে ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল রাজুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে।

    এ দিন সল্টলেকের একে ব্লকে কয়লা ব্যবসায়ী নরেন্দ্রর বাড়িতেও তল্লাশি চলে। যদিও তিনি গত কয়েক বছর ধরে গাড়ির শোরুম, হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেছেন বলে সূত্রের খবর। এরই পাশাপাশি দুর্গাপুরের বিধাননগর, সিটি সেন্টার, সেপকো টাউনশিপ–সহ পাণ্ডবেশ্বর থানার খোট্টাডিহি গ্রামে ইডি হানা দেয়।

    নরেন্দ্রর হিসেবরক্ষক সুশান্ত গোস্বামীর ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়। পাণ্ডবেশ্বরের যুধিষ্ঠির ঘোষ–এর বাড়িতে তল্লাশি চলে। এক সময়ে চোরাই কয়লার ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তিনি বালির ব্যবসা করেন বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।

    ইডির এক আধিকারিক জানান, শুক্রবার সকালে ধানবাদের ‘দেব ভিলা’-য় পৌঁছে দেখা যায় লালবাবু সিং সাতটি কুকুর ছেড়ে রেখেছেন। সে কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে বাইরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ইডি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। স্থানীয় সূত্রের দাবি, প্রায় দশবছর আগে লালবাবুর বাড়িতে সিবিআই হানা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে।

    বর্ধমানের পাশাপাশি এ দিন কলকাতার বাইপাসের একটি আবাসনে ব্যবসায়ী কৃষ্ণা মুরারী কয়ালের ফ্ল্যাটে এবং হাওড়ায় অন্য এক ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটেও তল্লাশি হয়। অভিযান চালানো হয় পুরুলিয়ার দুবড়া ও রুকনি এলাকায় দুটি কোক কয়লার কারখানাতেও। এরমধ্যে একটি কারখানা ঝাড়খণ্ডের এক ব্যবসায়ীর, অন্যটি ধানবাদের অনিল গোয়েলের মালিকানাধীন। সেখানকার নথিপত্রও যাচাই করেন গোয়েন্দারা।ইডি সূত্রের দাবি, এ দিনের তল্লাশিতে ১০ কোটি টাকার সোনা ও নগদ উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১২০টি জমির দলিল।

  • Link to this news (এই সময়)