• স্কুলের পরীক্ষার কী হবে? দুশ্চিন্তায় বিএলও-র কাজে ব্যস্ত শিক্ষকেরা
    আনন্দবাজার | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • এ বছর সরকারি স্কুলগুলিতে নতুন ক্লাসে ওঠার প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে তো?

    এই প্রশ্নই এখন ঘোর দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে রাজ্যের অগুনতি শিক্ষককে। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরের সমস্ত স্কুল থেকেই একাধিক শিক্ষক বিএলও হিসেবে নিযুক্ত হওয়ায় ভোটার তালিকারবিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। বাকি যাঁরা স্কুলে আছেন, তাঁদের দিয়ে এই ডিসেম্বরের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা নেওয়া, সেই খাতা দেখা, পড়ুয়াদের হলিস্টিক রিপোর্ট তৈরি করা এবং বাংলার শিক্ষা পোর্টালে সেই সব নামতোলার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিএলও-দের প্রাথমিক কাজ শেষ হলেও গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে পুরো ডিসেম্বর মাসই লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিএলও হিসেবে নিযুক্তহওয়া শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এমন বহু স্কুল রয়েছে, যেখানে শিক্ষক আছেন মাত্র দু’জন। বর্তমানেদু’জনেই বিএলও-র কাজে চলে গিয়েছেন। এই সমস্ত স্কুলে ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কারা তৈরি করবেন, পরীক্ষা কারা নেবেন, খাতা কারা দেখবেন এবং হলিস্টিক রিপোর্ট-ই বা কারা তৈরি করবেন, সেটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন।

    বিএলও-র কাজে যাওয়া শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, স্কুলের কাজ শেষ করার পরে অথবা ছুটির দিনে এসআইআরের কাজ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা যে সম্ভব নয়, তা বোঝা গিয়েছে গত কয়েকদিনেই। ফলে, বহু শিক্ষকই স্কুলে এসে শুধু হাজিরা খাতায় সই করেই চলে যাচ্ছেন বিএলও-র কাজে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএলও বললেন, ‘‘আমাদের কাজ সময়মতো শেষ করতে যে ভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তাতে কোনও মতেই স্কুল করে এই কাজ করা সম্ভবনয়।’’ শিক্ষকদের মতে, এর জেরে যদি সময় মতো ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিতে না পারা যায়, তা হলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পড়ুয়ারাই।

    ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ২০২২ সালের যে গাইডলাইন রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, খুব প্রয়োজন না হলে শিক্ষকদের বিএলও-র কাজে নেওয়া যাবে না। যদি বা নেওয়া হয়, তাহলে পঠনপাঠন ব্যাহত না করে বা ছুটির দিনে এই কাজ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ওই গাইডলাইন কেউ মানছেন না।’’ ‘শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী বিএলও ডিউটি প্রতিরোধ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক অনিমেষ হালদারবললেন, “শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনও কাজ শিক্ষকদের দিয়ে করানো যাবে না। ডিসেম্বর মাসে যেখানে স্কুলগুলিতে শিরে সংক্রান্তি অবস্থা হয়, সেখানে শিক্ষকেরা না থাকলে কী ভাবে পড়ুয়াদের পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে? সব মিলিয়ে বিএলও-রা মারাত্মক মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছেন।’’

    শিক্ষকেরা আরও জানাচ্ছেন, আজকাল হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে গেলে এক-এক জন পড়ুয়ার জন্যই পাঁচ পাতার রিপোর্ট লিখতে হচ্ছে। সেখানে প্রত্যেক পড়ুয়ার বিষয়ে অনেক খুঁটিনাটি তথ্য লিখতে হচ্ছে। তাই আগে একপাতায় যে রিপোর্ট তৈরি হয়ে যেত, এখন সেটির জন্যই পাঁচ পাতালাগছে। ফলে, কাজও অনেক বেড়ে গিয়েছে। এর পরে আবার সেই ফলাফল বাংলার শিক্ষা পোর্টালে তুলতে হবে। এই সব কাজ শেষকরতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। কারণ, পয়লা জানুয়ারি থেকেনতুন ক্লাসের বই দেওয়া শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকেরাই যদি স্কুলে নাথাকেন, তা হলে এই সব কাজ করবেন কারা?

    বিএলও-দের কাজের চাপ না কমালে স্কুলের পঠনপাঠন আরওবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ নিয়েশিক্ষা দফতর কি কোনও পদক্ষেপ করবে না?

    দফতরের এক কর্তা তথা কলকাতার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না অবশ্য বললেন, ‘‘বিএলও-দের বিষয়ে যে কোনও রকম নির্দেশনির্বাচন কমিশনকে লিখিত ভাবে শিক্ষা দফতরকে জানাতে হবে।কারণ, এখন ওঁরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছেন। কমিশনের কোনও মৌখিক নির্দেশ মানাহবে না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)