• পদক্ষেপ শূন্য সাত দিনেও, অন্ধকারেই এজ়রা স্ট্রিটের আলোর বাজার
    আনন্দবাজার | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • মামলা হয়েছে। কিন্তু সেই মামলায় কোনও কড়া পদক্ষেপ হয়েছে কি? উত্তর, না। কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে? এ ক্ষেত্রেও উত্তর, না। এখানেই শেষ নয়, আগুন লাগার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়র ফিরহাদ হাকিম তিন দিনের মধ্যে ব্যবসায়ী, পুলিশ, দমকল, বিদ্যুৎ পরিষেবা সংস্থা-সহ সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ঘোষণা করে এলেও হয়নি তা-ও। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বার বার আগুন লাগে যে বড়বাজারে, সেই এলাকা নিয়ে প্রশাসন এমন উদাসীন কেন? কেন ঘটনার সাত দিন পরেও এজ়রা স্ট্রিটে বেআইনি আলো, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানে আগুন লাগার ঘটনায় দেখা গেল না কোনও কঠোর পদক্ষেপ?

    প্রশাসনের তরফ থেকে স্পষ্ট উত্তর মিলছে না। মেয়র ফিরহাদ হাকিম শুধু জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে সকলকে নিয়ে তিনি বসবেন। কিন্তু আশঙ্কার বিষয়, এর মধ্যেই এজ়রা স্ট্রিটের পুড়ে যাওয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা সমস্তটা নিজেদের মতো করেই গুছিয়ে নেওয়ার দাবি করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘বৈঠকের কী আছে! আগে যেমন ছিল, তেমন ভাবেই সবটা সাজিয়ে নিচ্ছি আমরা।’’ যা নিয়ে ওই চত্বর সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের দাবি, নিয়ম-বিরুদ্ধ ভাবে দোকান করতে গিয়েই আগুন লেগেছিল, পোড়া দোকান সারানোও হচ্ছে নিয়ম-বিরুদ্ধ ভাবেই। ভুক্তভোগীদের আবার দাবি, এর অর্থ, প্রশাসনিক উদাসীনতায় ফের এজ়রা স্ট্রিটকে আগের অবস্থাতেই ফিরিয়ে দেওয়া। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকও আগুন লাগার দিন থেকেই দাবি করে আসছেন, ‘‘আমি এখানে ২২ বছর ধরে কাউন্সিলর। ২২ বার এজ়রা স্ট্রিটের একই জায়গায় আগুন লাগতে দেখেছি। প্রশাসনকে বার বার চিঠি দিয়েও কাজ হয় না। কেন বড়বাজার নিয়ে প্রশাসন এত উদাসীন, বোঝা যায় না।’’

    এজ়রা স্ট্রিট জুড়ে বেআইনি ভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আলোর দোকান বসানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কোথাও পুর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্মাণ হয়েছে, কোথাও যেমন খুশি ডালা পেতে দখল করে নেওয়া হয়েছে একের পর এক জায়গা। সেখানে নেই কোনও রকম অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। এর মধ্যেই এখানে আগুন লেগেছে ফি বছর। তারের জটে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, প্রয়োজনের সময়ে দমকলের গাড়ি পর্যন্ত ঢোকানো যায় না। নাস্তানাবুদ হতে হয় বেআইনি পার্কিং সরানোর ক্ষেত্রেও। এর মধ্যেই ওই চত্বরে পুরসভার তালিকায় থাকা ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজ ভবন, একটি পার্সি গির্জাও দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই গির্জার গেটের সামনে সার সার দোকান পাতা থাকে। গির্জার দেওয়ালে পেরেক পুঁতে আলোর চেন ঝুলিয়ে চলে বিক্রিবাটা। সিঁড়িতেও ডাঁই করে রাখা থাকে পর পর বস্তা। প্রয়োজনের সময়ে সেই পথে নেমে আসারও সুযোগ নেই। অবস্থা এমন যে, আইনি লড়াই পেরিয়ে গির্জার দখল মুক্তির কাজই করে ওঠা যাচ্ছে না বছরের পর বছর।

    গত শনিবার ভোরে আগুন লাগে এজ়রা স্ট্রিটের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আলোর বাজারে। দমকলের ২৫টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৪৮ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানকার ২৬ নম্বর বাড়ি থেকে আগুনটি পাশের ২৭, ১৯ এবং ৩২ নম্বর বাড়িতে ছড়ায়। ২৬ নম্বর ঠিকানায় থাকা পার্সি গির্জাটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। এর পর থেকে পুড়ে যাওয়া সমস্ত বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগই বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। পুলিশ ও দমকলের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি। ‘কলকাতা ইলেকট্রিক ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক অলোক সিংহ বলেন, ‘‘পাঁচটার মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হচ্ছে অনেককে। এই পরিস্থিতির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তি হচ্ছে না, অন্যেরা ভুগছে।’’ এর পরে তাঁরমন্তব্য, ‘‘ঘটনা ঘটলে এলাকায় গিয়ে নেতা-মন্ত্রীরা এক রকম মন্তব্য করেন। কিন্তু কাজের কাজ হয় না। সাত দিন কেটে গেলেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসলেন না প্রশাসনের কেউ। যত সময় যাবে, ততই আগের মতো দখল হবে সব।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)