• ভুয়ো নথিতে ফৌজদারি কেস নয়? প্রশ্নে কমিশন
    এই সময় | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: একাদশ–দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগের নথি যাচাইয়ে যে ২৬ জন আবেদনকারী জাল ডকুমেন্টস জমা দিয়েছিলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের বাদ দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। কিন্তু তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ ‍করা হয়েছে— এমন কোন‍ও তথ্য দিতে পারেনি এসএসসি।

    সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার এই ২৬ জন ভুয়ো চাকরিপ্রার্থী জাল নথি নিয়ে তথ্য যাচাই করতে একেবারে কমিশনের সদর দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁদের কারও কাছে ছিল শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত জাল সার্টিফিকেট, কেউ এনেছিলেন জাল জাতিগত শংসাপত্র। তাঁদের নাম ইন্টারভিউ তালিকা থেকে বাদ দিলেও এসএসসি কেন তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ করল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

    এসএসসির একাধিক সূত্র এই ২৬ জনের ভুয়ো নথি জমা করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও শুক্রবার কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের দাবি, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, এসএসসি কর্তৃপক্ষ কি জেনেশুনেই কাউকে আড়াল করতে চাইছেন? যদিও শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    সূত্রের খবর, একাদশ–দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় এই ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীদের কেউ কেউ স্কুলের প্যাডে প্রধান শিক্ষকের সই করা এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট পর্যন্ত এনেছিলেন।

    আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘সব কিছু জেনে শুধু তাঁদের নাম কেটে দিয়ে ওই ২৬ জনকে ছেড়ে দেওয়াটা যথেষ্ট পদক্ষেপ নয়। এ ধরনের জাল নথি সাবমিট করার চেষ্টা একটা ফৌজদারি অপরাধ। কর্তৃপক্ষের উচিত এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এর পিছনে আরও কোনও বড় চক্র আছে কি না, তা জানা যায়। আইনে সেই সংস্থান রয়েছে।’

    যদিও এই পরিস্থিতির জন্য ২০১৬–এর চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা এবং প্রধান শিক্ষকদের একাংশ কিন্তু এসএসসিকেই দুষছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রের অভিযোগ, ‘এই ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে আসা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য মেরিট লিস্টে যোগ্যরা চান্স পেলেন না। কিন্তু শিয়ালকে ভাঙা বেড়া তো এসএসসিই দেখিয়েছে।’

    কেন? কারণ ব্যাখ্যা করে কৃষ্ণাংশু জানাচ্ছেন, এসএসসি ফর্মপূরণের সময়ে কোনও রকম তথ্য যাচাই না করেই এক্সপেরিয়েন্সের নম্বর বসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল চাকরিপ্রার্থীদের। আবেদনের সময়েই যদি যথাযথ কাগজপত্র নিয়ে ভেরিফাই করে তবে মেরিট লিস্ট প্রকাশ করার ব্যবস্থা থাকত, তা হলে এই রকম সমস্যা হতো না।

    তাঁর কথায়, ‘এর ফলে যে পেরেছে, যেখান থেকে পেরেছে, যা খুশি আবেদন করেছে। এতে প্রধান শিক্ষকদের তেম‍ন দোষ নেই। হয়তো দেখা যাবে, কোনও স্কুলে পার্টটাইম টিচার গিয়ে বলেছেন, স্যার প্যাডে লিখে দিন আমি এখানে এত বছর কাজ করছি। প্রধান শিক্ষকরাও সেটা লিখে দিয়েছেন হয়তো। সেটা যে চাকরির জন্য কেউ এসএসসি দপ্তর পর্যন্ত নিয়ে যাবেন, সেটা বোঝার উপায় কী?’

    চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তরফে হাবিব বাপি বলছেন, ‘আমাদের ধারণা, আবেদনের সময়ে কোনও রকম বিধিনিষেধ বা তথ্য না চাওয়ার ফলে এই ধরনের কেস আরও বাড়বে। ২৬ সংখ্যাটা খুবই কম। সেই কারণে আমরা বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষা কর্তাদের জানিয়ে এসেছি, এই বাতিল হওয়া ক্যান্ডিডেটদের জায়গায় আবার রিভাইজ়ড ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ করে সেকেন্ড ফেজ়ের জন্য তথ্য যাচাই করতে। কারণ, এদের জন্যই তো যোগ্য অনেক শিক্ষক ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়েছেন।’

  • Link to this news (এই সময়)