• ফের এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ রাজ্যে
    আজকাল | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ রাজ্যে। জানা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ব্লকের মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাহাদুরপুর মিয়াপাড়ায় এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ের।

    মৃতের নাম আকালি খান (৬২)। পরিবারের অভিযোগ, ভোটার তালিকায় নিজের নামের অমিল ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক দুশ্চিন্তা ও চাপেই ভুগছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল ইরফান খান।

    কিন্তু ২০২৫ সালের সংশোধিত তালিকায় নাম দেখানো হয় আকালি খান। দুটি সরকারি নথির অসামঞ্জস্যে তিনি গত কয়েকদিন ধরে চরম আতঙ্কে ছিলেন।

    পরিবারের দাবি, সঠিক নথি সংশোধনের জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে বহু দপ্তরে ঘুরেও সমাধান পাননি ওই ব্যক্তি। অভিযোগ উঠেছে, এরপর এসআইআর শুরু হতেই ওই ব্যক্তির ওপর চাপ বাড়তে থাকে, উদ্বেগ ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

    বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের ভাইপো মিনারুল খান জানান, ‘দুটি ভিন্ন নামে নথি থাকার কারণেই কাকা প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সেই চাপ থেকেই কাল রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে।’

    স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, গ্রাম বাংলায় বহু মানুষেরই বছরের পর বছর সরকারি নথিতে একাধিক নামে পরিচয় রয়েছে। হঠাৎ এসআইআর প্রক্রিয়া চালুর পরে এই অমিল সামনে আসায় সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছেন।

    তাঁদের অভিযোগ, সংশোধনের নামে এক অফিস থেকে অন্য অফিসে দৌড় করানো হচ্ছে। যাঁরা তুলনায় পড়াশোনা কম জানেন, তাঁদের কাছে এই নতুন নিয়ম বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি করছে, যা প্রাণহানির কারণও হচ্ছে।

    ঘটনার পর এলাকাজুড়ে চরম উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, একই সমস্যায় আরও মানুষ বিপদে পড়তে পারেন। প্রশাসনের কাছে তাঁরা দ্রুত সমাধান ও সহজ প্রক্রিয়ার দাবি তুলেছেন।

    উল্লেখ্য, এসআইআর প্রক্রিয়া শুরুর পর ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদে আতঙ্কজনিত হৃদরোগে দু’জনের মৃত্যু এবং তিনজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠেছে।

    প্রসঙ্গত, গত ১৯ নভেম্বর বাদুড়িয়ায় এক বৃদ্ধের এসআইআর কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার খবর মেলে। মৃতের নাম সফিকুল মণ্ডল (৫৮)। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার যদুরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি।

    পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় সফিকুল মণ্ডলের নিজের নাম থাকলেও পরিবারের অন্যদের না থাকায় প্রায় ১৫ দিন ধরে উদ্বিগ্ন ছিলেন। শেষ তিনদিন তিনি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।

    তার জেরেই মঙ্গলবার  দুপুরে কীটনাশক খান বলেই অভিযোগ।  মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

    সফিকুলের বড় ছেলে রুহুল আমিন মণ্ডল জানান, 'এসআইআর শুরুর পর থেকেই বাবা আতঙ্কের মধ্যেই ছিলেন । ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় বাবার নাম ছিল কিন্তু আমাদের তিন ভাইয়ের এবং বোনের নাম না থাকায় বেশ ১৫ দিন ধরে আতঙ্কে কাটাচ্ছিলেন, শেষ তিন দিন খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন অবশেষে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করলেন এস আই আর আতঙ্ক নিয়ে।' 

    বাদুড়িয়া বিধানসভার বিধায়ক কাজী আব্দুর রহিম জানান, 'আমি আজ বুধবার সকালে সফিকুল মণ্ডলের বাড়িতে গিয়েছিলাম তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলাম এবং কথাবার্তা বলার পর জানতে পারলাম উনি বেশ কয়েকদিন ধরে এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন। কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ।'
  • Link to this news (আজকাল)