আইসিসির ইনোভেশন কনক্লেভে অটল ইনোভেশন মিশনে গুরুত্ব
আজকাল | ২২ নভেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্তমানে দেশজুড়ে পড়াশোনার ধরন নিয়মিত পাল্টাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাতেও ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তি। বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি এআই নির্ভর, অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। ফলে, শিক্ষার উন্নতি করতে হলে ছাত্রছাত্রীদেরও সেরকম ভাবে ভাবনাচিন্তা করতে হবে, টেক স্যাভি হতে হবে।
শুক্রবার ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ইনোভেশন কনক্লেভের বিষয় ছিল এটাই। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি এবং নয়া ভাবনার মিশেল। আইসিসির ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটির চেয়ারম্যান সত্যম রায়চৌধুরী জানালেন, বর্তমানে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি ছাড়া কোনও কিছুই চলতে পারে না। সেটা স্কুল হোক কিংবা কলেজ।
তাঁর কথায়, ‘শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং নয়া ভাবনাচিন্তা একসঙ্গে এগোচ্ছে। খুব দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। পড়ুয়া এবং শিক্ষকদেরও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে হবে। দেশে অটল ইনোভেশন চালু হয়েছে, যেটা খুব ভাল পদক্ষেপ।’
বিশ্বে বর্তমানে প্রতি মুহূর্তে নতুন ভাবনা তৈরি হচ্ছে, নতুন প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে। স্কুলে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পড়ানো হচ্ছে, রোবোটিক্স পড়ানো হচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় ডেটা সায়েন্স পড়ানো হচ্ছে। যা এই প্রক্রিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির আচার্যের কথায়, ‘শিক্ষাকে যাতে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির সঙ্গে এক সুতোয় গেঁথে ফেলা যায় সে কারণে প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্র এবং রাজ্য। পাশাপাশি, অনেকেই নিজস্ব উদ্যোগে এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি করে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বাংলায় বেশির ভাগ পড়ুয়াই উঠে আসে গ্রাম থেকে। আমি দীপক বাগলাকেও একথা জানিয়েছি’।
এদিনের অনুষ্ঠানে সত্যম রায়চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্কুল এবং হায়ার এডুকেশনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিনোদ কুমার, অটল ইনোভেশন মিশনের মিশন ডিরেক্টর দীপক বাগলা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরঞ্জীব উপাচার্য এবং অধ্যাপক অনুপম বসু।
আইসিসি ন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটির চেয়ারম্যান জানালেন, ‘দীপক বাগলার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি জানালেন আরও ১০ হাজার স্কুলে অটল মিশন চালু হয়েছে, নতুন ল্যাব চালু হয়েছে। আরও ৫০ হাজার স্কুলে খুব শীঘ্রই চালু করা হবে। স্কুল পর্যায় থেকেই এটা চালু হওয়ায় পড়ুয়ারা অনেক বেশি নতুনভাবে ভাবনাচিন্তা করতে পারবে’।
উপস্থিত অতিথিদের সকলেরই মতে, বর্তমানে শিক্ষা শুধুমাত্র বইয়ের মধ্যে আটকে নেই। শিক্ষাকে যাতে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে তা দেশের উন্নতির কাজে লাগানো যায় সেটাই করছেন বিশেষজ্ঞরা। অটল মিশনের ডিরেক্টর দীপক বাগলা বলেন, ‘ইতিমধ্যেই এই মিশনে ২৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ১১২ জন পড়ুয়া সই করেছে। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারই সই করেছে প্রায় ৩০০০ পড়ুয়া। ২০৪৭ সালের ১৫ আগস্টের মধ্যে ভারতবর্ষকে যাতে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যেই এগোনো হচ্ছে’।
রাজ্যের স্কুল এবং হায়ার এডুকেশনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিনোদ কুমার শিক্ষার উন্নতিতে বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় ৯০% পড়ুয়া সরকারি স্কুলে পড়ে। এই হিসাবটাই বলে দেয় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সরকারি বিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রয়েছে। তবে আমি বলব নিজের উদ্যোগে কেউ এগিয়ে আসতে চাইলে অবশ্যই আসুন’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক এআই নির্ভর প্রযুক্তি তৈরি করেছি যেটা প্রতিটি পড়ুয়ার মেধা বলে দিতে পারবে। সবাই তো সমান হয় না। ফলে এই প্রযুক্তিতে আমরা বুঝতে পারব কোন পড়ুয়ার মধ্যে কতটা মেধা রয়েছে। সেই অনুযায়ী তাদের পড়াশোনা করানো হবে’।
অন্যদিকে, চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানালেন, কীভাবে শিক্ষার এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনকিউবেশন সেল তৈরি হয়েছে। যাতে পড়ুয়া এমনকী অধ্যাপকদেরও চিন্তাভাবনাতে উদ্ভাবন লক্ষ্য করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার ক্ষেত্রে আরও বেশি করে ডেটা সায়েন্স, এআইয়ের ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে’।
অধ্যাপক অনুপম বসু আবার জানালেন, শুধুমাত্র প্রথাগত পড়াশোনা করেই যে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা আসে তেমনটা নয়। অনেকেই এমন আছেন যাঁরা প্রথাগত ভাবে পড়াশোনা না করে অনেক কিছু আবিষ্কারের ক্ষমতা রাখেন। ফলে, এরকম কাউকে পেতে গেলে আরও বেশি করে নজর রাখতে হবে, শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলও এক্ষেত্রে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।