• এনুমারেশন ডেডলাইন ৪ ডিসেম্বর, কড়া হুঁশিয়ারি কমিশনের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • এবারের ভোটপর্বকে সামনে রেখে এনুমারেশন এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নিয়ে নির্বাচন কমিশন আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিউটাউনে ডিএম ও এডিএম পর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যেই এনুমারেশন ফর্ম জমা, যাচাই এবং ডিজিটালাইজেশন সম্পূর্ণ করতেই হবে। সময়সীমা বাড়ানো বা কাজ ফেলে রাখার কোনও সুযোগ


    থাকবে না।

    শুক্রবারের সেই বৈঠক ও ইভিএম চেকিং কর্মশালায় জ্ঞানেশ ভারতী বলেন, ‘অধিকাংশ বিএলও অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। কমিশন তাঁদের পরিশ্রমকে যথাযথ স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কিছু বিএলও রয়েছেন, যারা নিয়ম না মেনে, নিজের মতো করে কাজ করছেন। এটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

    তিনি নির্দেশ দেন— ‘গাইডলাইন না মানলে প্রথমে শোকজ করুন। তবুও সংশোধন না হলে সাসপেন্ড করুন। প্রথম দিন থেকেই সাসপেন্ড করতে বলছি না, কিন্তু নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নিতেই হবে।’

    কমিশনের এই বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে যে, মাঠপর্যায়ের কাজে কোনওরকম ঢিলেমি রেয়াত করা হবে না। ইতিমধ্যেই বেলেঘাটা বিধানসভায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাতজন বিএলওকে শোকজ করা হয়েছে, যা কমিশনের অবস্থানের কঠোরতা স্পষ্ট করে।

    বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল স্বীকার করেন যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এত বিশদ কাজ শেষ করার চাপ অবশ্যই রয়েছে। তাঁর মন্তব্য—


    ‘চাপ তো থাকেই। কিন্তু পাশের রাজ্য বিহারেও তো এসআইআর প্রক্রিয়া হয়েছে। আমরা কেন পারব না? আমাদেরও পারতেই হবে।’ তিনি আরও জানান, বুথ-পিছু সর্বোচ্চ ভোটারের সংখ্যা ১২০০ হলেও অধিকাংশ বুথেই গড় ভোটারসংখ্যা ৮০০-এর মতো। ফলে প্রতিটি ধাপ— ফর্ম সংগ্রহ, যাচাই, সংশোধন, ঘরে গিয়ে তথ্য মিলিয়ে দেখা এবং তার ডিজিটাল এন্ট্রি— সবই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মেনে এগোতে হবে। প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ নির্দেশে এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে।

    এই পরিস্থিতির ঠিক আগের দিনই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘অতিরিক্ত চাপের ফলে কর্মীরা প্রাণহানির ঝুঁকিতে পড়ছেন। এত তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করলে প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

    রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য কমিশন এবং প্রশাসনের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়— ‘একদিকে কমিশন দ্রুততার ওপর জোর দিচ্ছে, অন্যদিকে রাজ্য সরকার কর্মী–নিরাপত্তা এবং বাস্তব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরছে। এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই মূল চাপ গিয়ে পড়ছে মাঠপর্যায়ের বিএলওদের ওপর।’


    এনুমারেশন কাজের তিনটি ধাপ—১) ফর্ম সংগ্রহ। ২) তথ্য যাচাই ও ঘরে গিয়ে মিলিয়ে দেখা। ৩)ডিজিটালাইজেশন। তবে সবকটিই সময়সাপেক্ষ ও পরিশ্রমসাধ্য। প্রতিটি ভোটারের তথ্য আলাদাভাবে যাচাই, ঠিকানা পরিবর্তন বা নতুন নাম যোগ করার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। ফলে মাঠপর্যায়ে নিযুক্ত বিএলওদের ওপর কাজের চাপ বহুগুণে বেড়েছে।

    প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, অনেক জায়গায় দৈনন্দিন দায়িত্বের পাশাপাশি এনুমারেশনের কাজ একসঙ্গে সামাল দিতে গিয়ে কর্মীরা শারীরিক ও মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছেন। ফলে কোনও ভুল হলে তার দায়ভারও তাঁদের ওপরই বর্তায়।


    একদিকে কমিশনের অবস্থান– সময়সীমা অপরিবর্তিত, কোনও গাফিলতি চলবে না।

    অন্যদিকে, রাজ্যের বক্তব্য– কাজের গতি বাড়ানো জরুরি, তবে কর্মীদের বাস্তবিক সীমাবদ্ধতা এবং নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

    বিশেষজ্ঞদের মতে তাড়াহুড়োয় ভোটার তালিকার গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা সবসময় থাকে। রাজনৈতিক চাপও পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।

    এর মধ্যেই বড় প্রশ্ন— সময়মতো কি সব কাজ শেষ হবে? সময়সীমা যত ঘনিয়ে আসছে, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উদ্বেগও তত বাড়ছে। তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত এনুমারেশন কাজ কি নিখুঁতভাবে শেষ করা সম্ভব হবে? প্রশাসন আশাবাদী, কমিশন দৃঢ়, আর কর্মীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিনের বাস্তবতার সঙ্গে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)