আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা ২ নম্বর ব্লকের পিয়াশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের হুমগড়ের জঙ্গলে দেখা মিলল সূর্যশিশির উদ্ভিদের। এলাকায় উপস্থিত হলেন পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৌতুহলীরা। মেদিনীপুর জুড়ে সূর্যশিশির নিয়ে জোর আলোচনা।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু জঙ্গলে বিরল মাংসাশী উদ্ভিদ সূর্যশিশির হঠাৎ করে আবিষ্কৃত হওয়ায় বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্ভিদটি পতঙ্গভুক এবং এর পাতাগুলো আঠালো, যা পোকামাকড় ধরতে সাহায্য করে। সাধারণত আমাজন জঙ্গলে দেখা গেলেও, বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী, জয়পুর ও বিষ্ণুপুরের মতো অঞ্চলে এর উপস্থিতি গবেষকদের কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
মেদিনীপুরের জঙ্গলে সূর্য শিশির পাওয়া যাওয়া নিয়ে স্থানীয় উদ্ভিদ জগতে আলোচনাও তুঙ্গে। সাধারণত আমাজন জঙ্গলের মতো দূরবর্তী অঞ্চলে বেশি দেখা যায় এমন একটি মাংসাশী উদ্ভিদের কিন্তু এবার মেদিনীপুরের জঙ্গলে সূর্যশিশিরের উপস্থিতি গবেষক ও প্রকৃতি প্রেমীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সূর্যশিশিরের বৈজ্ঞানিক নাম Drosera rotundifolia যা একটি মাংসাশী উদ্ভিদ এবং প্রধানত পোকামাকড় শিকার করে বেঁচে থাকে। এর পাতার ওপর থাকা শিশিরের মতো আঠালো ফোঁটাগুলি দেখে এর নামকরণ করা হয়েছে। এটি মূলত নিম্নমানের খনিজ পুষ্টি সম্পন্ন মাটিতে জন্মে, তাই পোকামাকড় থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে।
সূর্যশিশিরের পাতাগুলো ছোট এবং গোলাকার। পাতার উপরিভাগে থাকা ডাঁটাযুক্ত গ্রন্থিগুলি থেকে এক ধরনের আঠালো শ্লেষ্মা (mucilage) নিঃসৃত হয়, যা দেখতে শিশিরের মতো। এই আঠা শুধু শিকারকে আটকে রাখাই নয়, বরং এর একটি বিশেষ গন্ধও রয়েছে যা পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে।
যখন কোনও পতঙ্গ আঠায় আটকে যায়, তখন পাতাগুলি ধীরে ধীরে বেঁকে গিয়ে পতঙ্গটিকে সম্পূর্ণভাবে আবদ্ধ করে ফেলে, উদ্ভিদটি শুধুমাত্র সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে না, বরং শিকার করা পোকামাকড়কে হজম করেও পুষ্টি গ্রহণ করে। এই অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ করার ফলে, কম খনিজ সম্পন্ন মাটিতেও এটি ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
সূর্যশিশির অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব মহাদেশেই পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এই উদ্ভিদ দেখা গেছে।
সূর্যশিশির জীববিজ্ঞানের একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ যা প্রমাণ করে কীভাবে উদ্ভিদও শিকার করতে পারে। এর উপস্থিতি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উদ্ভিদটি আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।