• 'সংসার ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে... আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশনই দায়ী,' কাজের চাপে আত্মঘাতী কৃষ্ণনগরের BLO! বিস্ফোরক নোট...
    ২৪ ঘন্টা | ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • অনুপ দাস: ভয়ংকর! মর্মান্তিক! হৃদয় বিদারক! সাদা রুল টানা পাতার প্রথমেই স্পষ্ট করে লেখা, 'আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী... এই অমানুষিক কাজের চাপ আমি নিতে পারছি না।' স্পষ্ট ভাষায়, স্পষ্ট কথায় এই কথাগুলি নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) দায়ী করে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে (Nadia Krishnagar) আত্মঘাতী এক বিএলও (BLO Suicide)। নাম রিঙ্কু তরফদার। বয়স প্রায় ৫৪ বছর। পেশায় একজন পার্শ্বশিক্ষিকা ছিলেন তিনি। চাকরি থেকে অবসর নিতে আর ৫ বছর-ই বাকি ছিল। কিন্তু SIR-এর (SIR in Bengal) কাজের 'অসম্ভব চাপ' (BLO Work Pressure) নিতে না পেরেই আত্মঘাতী তিনি। এমনটাই দাবি পরিবারের। এমনকি রিঙ্কু তরফদার নিজেও তাঁর সুইসাইড নোটে (Sucide Note) লিখে রেখে গিয়েছেন সেকথা। 

    নদিয়ার চাপড়া বাঙালঝি এলাকার ২০১ নম্বর বুথের BLO ছিলেন রিঙ্কু তরফদার। আদি বাড়ি নদিয়ার চাপড়া ব্লকের বাঙালঝি গ্রামে। গত ১৫ বছর হয়েছে কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলায় নতুন বাড়ি করেছিলেন (Nadia Krishnagar)। সেখানেই থাকতেন স্বামী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে। পার্শ্বশিক্ষিকার চাকরি করতেন চাপড়া বাঙালঝি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে। চাপড়া বাঙালঝির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ২০১ নম্বর বুথে BLO-এর দায়িত্ব পান তিনি। পরিবার জানিয়েছে, BLO-র দায়িত্ব পাওয়ার পরই থেকেই মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। প্রায়ই বলতেন, আর চাকরি করব না, আর পারছি না এই BLO-এর কাজ (BLO Work Pressure)। এরপরই শনিবার ভোরে কৃষ্ণনগর নিজের বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন রিঙ্কু তরফদার (BLO Suicide)। বাড়ির লোকই প্রথম ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। তারপর পুলিসে খবর দিলে, পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে কৃষ্ণনগর পুলিস মর্গে নিয়ে যায়। মৃতের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে পুলিস। 

    'আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী'


    সেই সুইসাইড নোটে (Sucide Note) রিঙ্কু তরফদার লিখেছেন, "আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন (EC) দায়ী। আমি কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। খুবই সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই অমানুষিক কাজের চাপ আমি নিতে পারছি না। আমি একজন পার্শ্ব শিক্ষিকা। বেতন পরিশ্রমের তুলনায় খুবই কম, কিন্তু এরা আমাকে ছাড় দিল না।" তাঁর অসহায়তার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, "অফলাইন কাজ আমি ৯৫% শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু অনলাইন আমি কিছুই পারি না (Enumeration Form Digitisation)। বিডিও অফিসে ও সুপারভাইজারকে জানানো সত্ত্বেও কেউ কোনও ব্যবস্থা করল না।" তাঁর এই পরিণতির জন্য একদিকে যেমন তিনি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন, তেমনই তাঁর পরিবার যে তাঁকে খুব যত্নে রেখেছিল, তাঁর পরিবার যে তাঁর এই চরম সিদ্ধান্তের পিছনে দায়ী নয়, সেকথাও নোটে স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন রিঙ্কু তরফদার। নোটের একদম শেষে তিনি লিখেছেন, "আমার স্বামী, ছেলে, মেয়ে কেউ দায়ী নয়। ওরা আমাকে যথেষ্ট যত্নেই রাখে।"

    'সংসার ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে'


    নিজে হাতে গড়া, সাজানো এই সংসার ছেড়ে যেতে তাঁর কতটা কষ্ট হচ্ছে, সুইসাইড নোটে সেই কথাও লিখেছেন রিঙ্কু তরফদার। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁকে ঘিরে ছিল ছেলে-মেয়ে, স্বামী আর সংসারের চিন্তা। শেষ চিঠিতে আত্মঘাতী বিএলও রিঙ্কু তরফদার ছেলে-মেয়েদের ভালো থাকতে বলেছেন। তাঁদের বাবা মানে তাঁর স্বামীর দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন। আলমারিতে কোথায় কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছেন, তাও লিখে গিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "লিন্টু, রাইমা ভালো থাকিস। বাবার দিকে খেয়াল রাখিস। জীবনে দুই সন্তানের মঙ্গল ছাড়া কিছুই বুঝিনি। আমার সংসার ছেড়ে যেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। নিজে হাতে করে এই সংসার পাতা... পোস্ট অফিসের FD-র বইগুলো আলমারিতে আছে। PNB ও SBI-এর বইও আলমারিতে থাকল।"

    'আমার পক্ষে সম্ভব নয়'


    একইসঙ্গে ভোটার ফর্মগুলো কার কাছে রাখা আছে, তাও চিঠিতে জানিয়ে গিয়েছেন তিনি। নিজের সন্তানদের আগলে রাখার কথা বলেছেন আত্মীয়দের। ভাই-বোনকে বলেছেন নিজের মাকে দেখে রাখার কথাও। ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্কুলের সহকর্মীদেরও। স্কুলের প্রতি যে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই, তাও স্পষ্ট তাঁর এই চিঠিতে। চিঠিতে তাঁর আতঙ্ক, ভয়, অপারগতা কথা স্পষ্ট লিখেছেন রিঙ্কু তরফদার। লিখেছেন, "বিএলও-র কাজ তুলতে না পারলে, প্রশাসনিক চাপ আসলে তা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।"

    মালবাজারেও আত্মঘাতী BLO, কোন্নগরে সেরিব্রাল স্ট্রোক


    স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা, এই চিঠি সামনে আসার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তোলপাড় পড়ে গিয়েছে সব মহলে। রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের বাড়ি একই পাড়ায়। খবর পেয়েই তিনি ছুটে যান রিঙ্কু তরফদারের বাড়ি। এই নিয়ে 'কাজের চাপের' কারণে দ্বিতীয় BLO আত্মঘাতী হলেন রাজ্য়ে। এর আগে ১৯ নভেম্বর নিজের বাড়িতেই আত্মঘাতী হন মালবাজার এলাকার বিএলও শান্তিমুনি এক্কা। সেক্ষেত্রেও পরিবার অভিযোগ করেছে, কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মহননের পথ বেছে নেন শান্তিমুনি। প্রসঙ্গত, দুদিন আগেই কাজের চাপে সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হন হুগলির কোন্ননগরের এক বিএলও। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর একদিক অসাড় হয়ে গিয়েছে। ওদিকে কাজের চাপে তামিলনাড়ু ও গুজরাটেও বিএলও-দের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

    SIR বন্ধের দাবি মমতার 

    এসআইআর-এর বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছে পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু সরকার। রাজ্যে অবিলম্বে SIR বন্ধের দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এই ঘটনাতেও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'আর কত প্রাণ হারাব আমরা? আর কত মৃতদেহ দেখতে হবে? আর কত মৃত্যু চায়?', এক্স-হ্য়ান্ডেলে পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের প্রতি।

    আপনি কি অবসাদগ্রস্ত? বিষণ্ণ? চরম কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার হাত ধরতে তৈরি অনেকেই। কথা বলুন প্লিজ... 


    iCALL (সোম-শনি, ১০টা থেকে ৮টা) ৯১৫২৯৮৭৮২১


    কলকাতা পুলিস হেল্পলাইন (সকাল ১০টা-রাত ১০টা, ৩৬৫ দিন) ৯০৮৮০৩০৩০৩, ০৩৩-৪০৪৪৭৪৩৭


    ২৪x৭ টোল-ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসন হেল্পলাইন-- কিরণ (১৮০০-৫৯৯-০০১৯)

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)