কেন্দ্রের নতুন শ্রম আইনে কী বদল কর্মজীবনে? কেনই বা বিরোধিতা?
প্রতিদিন | ২২ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের একেক রাজ্যে একেক রকম শ্রম আইন। এক এক রাজ্যে শ্রমিকদের এক এক রকম বেতন। আলাদা আলাদা রাজ্যে আলাদা আলাদা নিয়মে বেতন কাঠামো, একই সংস্থায় কাজ করেও রাজ্যভিত্তিতে শ্রমের পরিমাণ এবং পারিশ্রমিক আলাদা। শ্রমিকদের নিরাপত্তার আলাদা বিধি। এসব জটিলতা কাটাতে নতুন শ্রম আইন চালু করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৪৪টি আলাদা আলাদা শ্রম আইনকে সংগঠিত করে চারটি শ্রম কোড চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয় নতুন শ্রম আইনে। সেই শ্রম আইন এবার কার্যকর হয়ে গেল।
২০২০-র শেষ পর্বে সংসদে শ্রম বিল পাশ করিয়েছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চালু ৪৪টি শ্রম আইনের মধ্যে ১৫টিকে সম্পূর্ণ অপ্রসাসঙ্গিক হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বাকি ২৯টিকে নিয়ে আসা হয় চারটি শ্রমবিধিতে। কোড অন ওয়েজেস, এতে সমস্ত কর্মীদের একটি বেসিক বেতন প্রদান করা হবে। রাজ্যের ভিত্তিতে বদল হবে না। কোড অন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিলেশনস, এতে কর্মীদের যখন তখন ধর্মঘট প্রতিরোধ করা হবে। পেশাগত সুরক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মপরিবেশ কোড, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কোড, ২০২০।
নতুন শ্রম কোড চালু হলে কী কী বড় বদল?
নয়া শ্রমবিধি অনুযায়ী, সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ বাধ্যতামূলক। তবে সেটা ৪ দিন ৫ দিন বা ৬ দিনে হতে পারে।
নতুন শ্রমবিধিতে, ৯-১২ ঘণ্টার শিফট করতে হতে পারে কর্মচারীদের (আগে ছিল ৮-৯ ঘণ্টা)।
যাঁরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করবেন, তাঁরা সপ্তাহে তিনদিন ছুটি পাবেন। এর ফলে সাপ্তাহিক কাজের দিন ৪ দিনে নেমে এলেও মোট কর্মঘণ্টার কোনও পরিবর্তন হবে না।
এছাড়া প্রতি পাঁচ ঘণ্টা টানা কাজের পর ৩০ মিনিট বিরতি নেওয়া যাবে।
নয়া বিধিতে মহিলারা নাইট শিফট করতে পারবেন। মহিলাদের সমবেতন ও সমসম্মান নিশ্চিত করা হবে।
কর্মীদের ত্রৈমাসিকে ওভারটাইমের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ ঘণ্টা থেকে বেড়ে হতে পারে ১২৫ ঘণ্টা। ওভারটাইমের বেতন সাধারণ বেতনের দ্বিগুণ হতে হবে।
ধর্মঘট করার অন্তত ৬০ দিন আগে নোটিস দিতে হবে।
কর্মীদের বেসিক বেতন মূল মোট বেতনের ৫০ শতাংশ হতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ কমে যাবে।
ফিক্সড টার্মে যে সব কর্মীরা নিযুক্ত তাঁদের ক্ষেত্রে গ্র্যাচুইটি কার্যকর হবে কর্মজীবনের ১ বছর পর থেকেই। যা আগে ছিল ৫ বছর।
কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করলে ২ দিনের মধ্যে তাঁর সব প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে।
‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট বিধি তৈরি করা হবে।
কেন বিরোধিতায় শ্রমিক সংগঠনগুলি?
নতুন শ্রম আইনে শ্রমিকদের থেকে মালিকদের স্বার্থ বেশি সুরক্ষিত।
এই আইনের ফলে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা কমবে, ট্রেড ইউনিয়নগুলির ক্ষমতা হ্রাস হবে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ে সুবিধা হবে।
কর্মীদের কাজের সময় বেড়ে যাওয়া।
বেতন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা।
চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ বাড়বে। স্থায়ী কর্মসংস্থান কমবে।
বেসরকারিকরণে উৎসাহ দেবে এই শ্রম আইন।
এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নয়া আইনের খসড়া গাইডলাইন মেনে নিয়েছে। বাংলা থেকে শুরু করে কয়েকটি রাজ্য এর বিরোধিতা করেছে। ফলে দেশজুড়ে এই বিধি এখনও কার্যকর করা যায়নি।