• অসুস্থ মা, বিএলও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছে কিশোর
    আজকাল | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: অসুস্থ মা। তাই এসআইআর-এর জন্য বিএলও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছে কিশোর ছেলে। ছেলেই সই করছে রিসিভ কপিতে। তাতেই আতঙ্ক বাঁধছে এসআইআর ফর্ম জমা দিতে আসা ভোটারদের মধ্যে। 

    ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের গড়ালবাড়ি ১৭ /১৮০ নম্বর পোলিং স্টেশন, খান সাহেব পাড়া এলাকায়। গত দিন দশেক থেকে এই এলাকার দায়িত্বে থাকা বুথ লেভেল অফিসার আঞ্জুয়ারা বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ রয়েছেন। তাই এলাকার ভোটারদের কাছ থেকে এনুমারেশন ফর্মের কপি জমা নিচ্ছেন তাঁর ছেলে আরিফ রহমান। 

    এলাকার ভোটাররা এনুমারেশন ফর্ম জমা দিতে গিয়ে যখন দেখতে পাচ্ছেন আঞ্জুয়ারা বেগমের স্বাক্ষর দিয়ে এনুমারেশন ফর্ম রিসিভ কপি ভোটারদেরকে ফেরত দিচ্ছে একজন কিশোর, তাতেই আতঙ্ক ঘনাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় ভোটার সংখ্যা রয়েছে হাজার একান্ন। কিন্তু বিএলও অসুস্থ থাকলে সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা বা ব্লকের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের দাবি করছেন স্থানীয়রা। 

    স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুস্মিতা রায় বলেন, 'আঞ্জুয়ারা বেগম অসুস্থ রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু এটাও ঠিক নয়, যে তাঁর সই অন্য কেউ করে সে জমা দেবে।' স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব রায় সহ আরও জনা কয়েক ভোটার বলছেন, 'আমরা এনুমারেশন ফর্ম জমা দিতে এসে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছি। এসআইআর-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখানে সামান্য ভুলই ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যেতে পারে, সেই জায়গায় একজন কিশোর বিএলও-এর দায়িত্ব পালন করছে। আর তার হাতেই জমা দিতে হচ্ছে ফর্মের কপি।' 

    যদিও আরিফ রহমান জানিয়েছে, তার মা বিএলও-এর দায়িত্বে রয়েছেন। এবং তিনি অসুস্থ থাকার কারণে এই ফর্মগুলো জমা নিচ্ছে। এবং গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে সেগুলো জমা দেবে সে। যারা রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর চাইছেন, তাঁদের কপিতে মায়ের স্বাক্ষর করে দিচ্ছে সে। 

    এদিন বিএলও-র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন আরও একজন। পারফরমেন্স লো। মোট ১৩০০ ফর্মের মধ্যে ৩০০ এন্ট্রি করেছেন। লো পারফরমার পান্ডুয়ার বিএলও সুৃমিতা মুখার্জিকে ডেকে বিডিও অফিসে বসিয়ে রাখার অভিযোগ। বাড়ি ফিরে হাউহাউ করে কেঁদে ভাসালেন বিএলও। সেই ভিডিও ভাইরাল হল সমাজমাধ্যমে। 

    বিএলওর পারফরমেন্স খারাপ। তাই বিডিও অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। হেনস্থার অভিযোগে সরব হলেন বিএলও। তাঁর অভিযোগ, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে ফর্ম আপলোড করা যাচ্ছে না। এসআইআরের কাজে বিলম্ব হচ্ছে। ব্লক অফিসে ডেকে পাঠিয়ে বিএলওকে দিয়ে অনলাইন এন্ট্রি করার সময়েও বারবার সার্ভারে সমস্যা দেখা গেছে। 

    কাজের চাপে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। অসুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে কাজের চাপে কেঁদে ভাসালেন সুমিতা দেবী। আর সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্থানীয় অনিমেষ হালদারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই ভিডিও পোস্ট করা হয় সামাজিক মাধ্যমে। 

    পান্ডুয়া ব্লকের বাঁটিকা বৈচী গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম পাড়া এলাকার স্কুল শিক্ষিকা সুমিতা মুখার্জি (ঘোষ)। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি বিএলও হিসাবে কাজ করছেন পঞ্চায়েতের ৪১নং বুথে। এদিন সুমিতা দেবী জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসআইআরের কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০০ জনের নাম অনলাইনে আপডেট করেছেন। তারপরেও তাঁকে ব্লক অফিসে ডেকে পাঠিয়ে, অনলাইন এন্ট্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। 

    কিন্তু সেখানেও সার্ভারের সমস্যা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে চারটে পর্যন্ত সেখানে বসিয়ে রাখা হয়। সার্ভারের সমস্যা থাকায় তিনি যথাযথ কাজ করতে পারেননি। বারবার টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। কাউকে বলেও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। দুপুরে খাওয়া হয়নি। শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। 

    শরীর খুবই খারাপ লাগছিল তাঁর। এক সহকর্মীর সাহায্যে কোনও রকমে বাড়ি পৌঁছন। তবে কোনও অঘটন ঘটেনি। অনেক কিছুই ঘটতে পারত বলে দাবি তাঁর। সুমিতা দেবীর অভিযোগ, তাঁকে খুবই হেনস্থা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গুরুতর অসুস্থ হতে পারতেন তিনি। 

    তিনি আরও দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনের সঠিক কোনও পরিকল্পনা নেই। একাধিকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। বিএলওরা ফিল্ড ওয়ার্ক করছে। তাঁদের সমস্যাটা কেউ বুঝছেন না। এটা শুধু তাঁর একর সমস্যা নয়। সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে। স্বামী বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, সেদিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি করছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। বাড়িতে ওষুধ খাইয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। পোর্টালের সার্ভার ডাউন ছিল। অথচ সমস্যার দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁর স্ত্রীর উপর। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই অসুস্থ হয়েছেন।
  • Link to this news (আজকাল)