• দু’বছর ধরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ছক কষেছিল ‘মেডিকেল মডিউলে’র জঙ্গিরা, জেরায় এনআইএ-কে জানাল ধৃত মুজাম্মিল
    বর্তমান | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: লালকেল্লার সামনে গাড়ি বিস্ফোরণ কোনও তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা নয়। বহুদিন আগেই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র করেছিল জয়েশ-ই-মহম্মদের ‘মেডিকেল মডিউল’। ফরিদাবাদ থেকে ধৃত ডাঃ মুজাম্মিল শাকিলকে জেরা করে এমনই তথ্য পেল জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। শাকিল জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকেই তারা ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ছক কষতে শুরু করে। গত দু’বছর ধরে তারা বিস্ফোরক বানানোর জন্য রাসায়নিক, রিমোট ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করছিল। এসব কাজে মুজাম্মিলের অন্যতম সঙ্গী ছিল দিল্লি বিস্ফোরণে আত্মঘাতী জঙ্গি ডাঃ উমর উন নবি। বোমা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন ভিডিয়ো ও বই জোগাড়ও করেছিল উমর। কোন কোন জায়গায় বিস্ফোরণের ছক ছিল, তা এখন জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। 

    ২০০৭ সালে গোরক্ষপুরে এবং ২০০৮ সালে জয়পুর, আমেদাবাদ ও সুরাতে বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য মির্জা শাদাব বেগ এখন পাকিস্তানে। এই জঙ্গিও ছিল আল- ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। দিল্লির ঘটনায় তার কোনও যোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। 

    জেরায় মুজাম্মিল জানিয়েছে, বিস্ফোরক তৈরির জন্য ইউরিয়া এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কেনার দায়িত্ব ছিল তার। সে হরিয়ানার গুরুগ্রাম ও নুহ থেকে ২৬ কুইন্টাল এনপিকে সারও কেনে। এর জন্য খরচ হয়েছিল ৩ লক্ষ টাকা। বাকি বিস্ফোরকও নুহ থেকেই কেনা হয়। বোমা তৈরির বৈদ্যুতিন সামগ্রী কেনা হয়েছিল ফরিদাবাদের দুটি বাজার থেকে। গরমে যাতে ওই সব রাসায়নিক সার নষ্ট না হয়, তার জন্য একটি ডিপ ফ্রিজারও কিনেছিল মুজাম্মিল। উমরের কাজ ছিল ওই সব সার ও অন্যান্য সামগ্রী ঠিক অনুপাতে মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করা। তদন্তে একটি ময়দাকলের সন্ধানও মিলেছে। সেখানে ইউরিয়া গুঁড়ো করত মুজাম্মিল। এসবের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা নিজেরাই জোগাড় করেছিল মেডিকেল মডিউলের সদস্যরা। এর মধ্যে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছিল উমর। ধৃত মহিলা ডাক্তার শাহিন দিয়েছিল ৫ লক্ষ। সবমিলিয়ে ২৬ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে উমরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, এই টাকা নিয়ে আল-ফালাহর ক্যাম্পাসে উমর ও মুজাম্মিলের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। তারপরই মুজাম্মিলকে নিজের লাল ইকোস্পোর্ট গাড়িটি দেয় উমর। পরে ফরিদাবাদ থেকে ওই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

    শ্রীনগরের ডাক্তার আদিলের লকার থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার হয়েছিল। সেটি সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছে মুজাম্মিল। সে তদন্তকারীদের বলেছে, তার হ্যান্ডলার ছিল মনসুর নামে এক ব্যক্তি। আর উমরের হ্যান্ডলারের নাম হাশিম। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত ওকাসা নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে মুজাম্মিল, আদিল ও মুজাফফর তুরস্কে যায়। সেখান থেকে তাদের আফগানিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তদন্তকারীদের সন্দেহ, মুজাম্মিলের সঙ্গে টেলিগ্রাম অ্যাপে যোগাযোগ রাখত ওকাসা। কিন্তু হ্যান্ডলার নিয়ে সমস্যার জেরে পরে তাদের আর যোগাযোগ ছিল না।
  • Link to this news (বর্তমান)