সন্দীপ বর্মন, মাথাভাঙা (সাতগাছি): মাথাভাঙা-১ ব্লকের শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব সাতগাছি গ্রামে ধানখেতে চিতাবাঘ। প্রথমে স্থানীয়রা বিশ্বাসই করেননি। কিন্তু একের পর এক ব্যক্তিকে জখম করার পর গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মোট ছয়জন গুরুতর জখম হয়েছে চিতাবাঘের আক্রমণে। জখমদের তড়িঘড়ি মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তিনজনকে কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়েছে। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় যায় মাথাভাঙা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। বনদপ্তরের আধিকারিকরা গিয়ে চিতাবাঘটিকে ধরতে তৎপরতা শুরু করে। সন্ধ্যায় চিতাবাঘটি ধরা পড়ে। ঘটনাস্থলে ছিলেন মাথাভাঙা থানার আইসি হেমন্ত শর্মা, এসডিপিও সমরেন হালদার, বনদপ্তরের কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় এবং এডিএফও বিজন নাথ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির অদূরে খেতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন প্রতিমা ডাকুয়া ও তাঁর মা। চিতাবাঘটি খেতে লুকিয়ে ছিল তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। আচমকা প্রতিমাকে আক্রমণ করে। চিৎকার জুড়ে দেয় সে। পাশেই তাঁর কাকু হরিপদ ডাকুয়া খেতে কাজ করছিলেন। চিৎকার শুনে তিনিও ছুটে আসেন। কিন্তু চিতাবাঘটি সেই সময় পালিয়ে পাড়ার ভিতর ঢুকে পড়ে। তবে সাতগাছির মতো সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় চিতাবাঘ আসতে পারে তা প্রথমে কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু চিতাবাঘটি একের পর এক বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তখন পাড়াজুড়ে শুরু হয় চিৎকার চ্যাঁচামেচি। কয়েকজন চিতাবাঘটিকে মারতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েন। কয়েকজন ছবি তুলতে গিয়ে জখম হয়েছেন। একের পর এক ব্যক্তি জখম হওয়ার পর বিনোদ বর্মনের বাড়িতে চিতাবাঘটি ঢুকে পড়ে। পরে তাঁর ভাই বীরেন বর্মনের বাড়িতে চলে যায়। দুই ভাইয়ের বাড়ি লাগোয়া হওয়ায় চিতাবাঘটিকে খুঁজতে হিমশিম অবস্থা হয় বনকর্মীদের। এদিকে, চিতাবাঘের কথা চাউর হতেই প্রচুর মানুষ এলাকায় ভিড় করেন। মাথাভাঙা থানার পুলিশকে ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিতাবাঘের আক্রমণে জখম হয়েছেন প্রতিমা ডাকুয়া, বিনয় বর্মন, জীবন বর্মন, হেমন্ত বর্মন, দীনেশ বর্মন ও গিরীশ বর্মন।
প্রতিমার জ্যাঠা হরিপদ ডাকুয়া বলেন, ভাইঝি ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জমিতে ধান কাটছিল। আমি ও আমার স্ত্রী পাশের জমি থেকে ধানের আঁটি এনে উঠোনে রাখছিলাম। ওই সময়ে চিতাবাঘ ভাইঝিকে আক্রমণ করে। আমরা চিৎকার করে ছুটে যাই। কিন্তু চিতাবাঘটি পাড়ার মধ্যে ঢুকে পড়ে। প্রথমে চিতাবাঘ বলে চিৎকার করলেও কেউ বিশ্বাস করেনি। আমরা ভাইঝিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ওইদিকে বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় কোনও জঙ্গল বা চা বাগান নেই। কোথা থেকে চিতাবাঘ এলো কিছুই বুঝতে পারছি না।
কোচবিহারের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সন্ধ্যার দিকে চিতাবাঘটিকে রেসকিউ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে জলঢাকা নদী পেরিয়ে এসেছিল। পরবর্তী সময়ে সীমান্তবর্তী এই গ্রামে চলে আসে। চিতাবাঘটিকে বক্সা জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। জখমদের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করা হচ্ছে।