পরিচারককে মার, সার্ভিস রিভলভার উঁচিয়ে হুমকির অভিযোগ রানিবাঁধে, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে ক্লোজ করে তদন্তের নির্দেশ
বর্তমান | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া ও সংবাদদাতা, খাতড়া: টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে পরিচারককে মারধরের অভিযোগ উঠল রানিবাঁধ থানার এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ জানাতে গেলে পরিচারকের দিদির শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানিবাঁধ উত্তাল হয়ে উঠল। দফায় দফায় টায়ার জ্বালিয়ে রাজ্য সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার ধস্তাধস্তি ও র্যাফের লাঠিচার্জে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে বিজেপি নেতাকর্মীরাও যোগ দেন। শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামেন। তাঁরা রানিবাঁধ-ঝিলিমিলি রাজ্য সড়কের ক্ষুদিরাম স্ট্যাচু মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। যদিও ওই অফিসারের বিরুদ্ধে এদিন বিকেল পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে পুলিশের দাবি।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, রানিবাঁধ থানার অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য খাতড়ার এসডিপিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে যাতে প্রভাব না খাটাতে পারেন তারজন্য ওই অফিসারকে আপাতত পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। কারও উপর অত্যাচার চালানো আমরা বরদাস্ত করব না। অভিযোগকারী যুবককে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানোর জন্য বারবার বলা হলেও তিনি তা করেননি। আন্দোলনকারীদের একাধিকবার বলা সত্ত্বেও রাজ্য সড়ক থেকে সরে না যাওয়ায় পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছে। পরপর দু’দিন বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরোধের জেরে পর্যটক ও যাত্রীবাহী বাস সহ অন্যান্য যানবাহন জঙ্গলমহলে আটকে পড়ে। বাধ্য হয়ে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে। বেআইনিভাবে রাস্তা আটকে রাখা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা রুজু হয়েছে। ওই মামলায় ১৮জনকে আটক করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আটকদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হবে।
রানিবাঁধের ওই যুবক বলেন, রানিবাঁধ থানার ওই পুলিস অফিসারের ভাড়াবাড়িতে আমি কাজ করি। তাঁর প্যান্টের পকেটে কিছু টাকা ছিল। তা না জেনেই কার্তিক পুজোর দিন ওই প্যান্ট আমি কাচতে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। কাচার সময় আমি সেই টাকা পেয়েছিলাম। পরে উনি ফোন করে টাকার কথা জিজ্ঞাসা করেন। আমি তাঁকে টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ফেরত দেওয়ার কথাও বলি। সাময়িকভাবে আমার মানিব্যাগে টাকাটা রেখে দিয়েছি বলে তাঁকে জানাই। পরেরদিন উনি আমার উপর খেপে যান। তাঁর আলমারি থেকে ১২লক্ষ টাকা চুরি করেছি বলে অপবাদ দেন। অন্তত ছ’লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবিতে তিনি আমাদের বাড়িতে চড়াও হন। আমাকে তাড়া করে গোটা গ্রাম ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ান। শেষে তাঁর বাড়িতে ধরে নিয়ে যান। সেখানে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। জখম অবস্থায় আমাকে নিয়ে ওই আধিকারিক ফের আমাদের বাড়িতে চড়াও হন। আমাদের বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করা হয়। আমার দিদিকে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ জানালে মেরে ফেলা হবে বলে ওই অফিসার সার্ভিস রিভলভার উঁচিয়ে শাসানি দেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে অবশ্য ওই পুলিস অফিসার সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। এব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন বলে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন। রানিবাঁধে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ। -নিজস্ব চিত্র