• মা তারার নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে অসময়ে কার্তিকের আরাধনায় মাতল তারাপীঠবাসী
    বর্তমান | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: শনিবার নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে অসময়ে কার্তিকের আরাধনায় মেতে উঠল তারাপীঠ। বাংলার মানুষ যখন দুর্গাপুজোর জন্য সারাবছর অধীর অপেক্ষায় থাকেন, তখন তারাপীঠ প্রহর গোনে কার্তিকপুজোর জন্য। বহু বছর আগে এলাকায় কার্তিক পুজো শুরু হয়েছিল। ক্রমশ সেদিনের সেই সাদামাটা পুজো আজ উৎসবের চেহারা নিয়েছে। পুজো উদ্যোক্তারা থিম ও আলোকসজ্জার প্রতিযোগিতায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। 

    তারাপীঠের আরাধ্যা দেবী মা তারা। এখানে কোনও মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে দেবীপুজোর চল নেই। মা তারার অঙ্গেই দুর্গা, কালী, সরস্বতী, জগদ্ধাত্রী, লক্ষ্মী, অন্নপূর্ণা সহ সমস্ত দেবীর আরাধনা করা হয়। মূলত, কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে দেব সেনাপতির পুজো দেখতেই মানুষ অভ্যস্ত। কিন্তু তারাপীঠ তার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে দেবী অন্নপূর্ণার বদলে এলাকার মানুষজন কার্তিক পুজো করেন। জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ বছর আগে নবান্ন উৎসবের দিন তারাপীঠ মন্দির কমিটি প্রথম কার্তিক পুজো করে। তখন এই একটিমাত্র পুজোকে ঘিরে তারাপীঠবাসীর মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা ছিল। বর্তমানে পুজোর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে শিব ছাড়াও কার্তিক ও অসুরের লড়াইয়ের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। বছর যত গড়াচ্ছে, ততই এই পুজোর জাঁকজমক বাড়ছে। তাতে থিমের ছোঁয়া লেগেছে।

    তারাপীঠ মন্দির লাগোয়া স্থায়ী মণ্ডপে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পুজো করে আসছে মিলন সংঘ। এবার তাদের পুজো ৬৫ বছরে পদার্পণ করল। সূর্য মন্দিরের আদলে তারা মণ্ডপ গড়েছে। শুক্রবার রাতে মণ্ডপের উদ্বোধন করেন সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটির সভাপতি শ্যামল মুখোপাধ্যায় বলেন, চারদিন ধরে পুজো চলবে। বস্ত্র বিলি, দরিদ্র নারায়ণ সেবা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। রবীন্দ্রপল্লি উন্নয়ন সমিতি তাদের এবারের মণ্ডপটি রাজবাড়ির আদলে তৈরি করেছে। তাদের পুজো ২৯ বছরে পড়ল। সমিতির অন্যতম সদস্য ঝুলন দত্ত বলেন, দুর্গোৎসবের আনন্দ আমরা এই কার্তিক পুজোয় সুদে-আসলে তুলে নিই। প্রতিবছরই নতুনত্ব কিছু করি। ফিবছর পুজোর চারদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান ও যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি। এভাবেই নানা থিমপুজোর মাধ্যমে দেব সেনাপতি কার্তিকের আরাধনার পাশাপাশি নবান্ন উৎসবে মেতেছে তারাপীঠবাসী। তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, তারাপীঠবাসী দুর্গাপুজোর আনন্দ থেকে অনেক দূরে থাকে। কারণ তারাপীঠে কোনও দেবীমূর্তির চল নেই। তাই অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন উৎসব ও কার্তিক পুজোর জোড়া আনন্দে এখানকার মানুষজন মেতে উঠেছেন। তিনি আরও বলেন, নবান্ন উপলক্ষ্যে তারা মাকে দেবী অন্নপূর্ণা রূপে পুজো করা হয়। মাকে নতুন ধানের অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। এরপরই মণ্ডপগুলিতে পুজো শুরু হয়। প্রতিটি মণ্ডপে পাত পেড়ে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই চারদিন বামাক্ষ্যাপার সাধনাস্থল আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে।  রবীন্দ্রপল্লী উন্নয়ন সমিতির কার্তিক প্রতিমা।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)