সালারে ভিক্ষুকের ভাঙা বাড়ি থেকে কয়েক লাখ টাকা উদ্ধার!
বর্তমান | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনির ঘরেও সে ধন আছে। সালারের পিলখুণ্ডি গ্রামে নুর ইসলামের ভাঙা বাড়িতে ঢুঁ মারলে বাংলার বহুলচর্চিত এই প্রবাদবাক্যের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাবেন।
পিলখুণ্ডি গ্রামের নুর ইসলাম পেশায় ভিক্ষুক। মুক ও বধির ওই ব্যক্তির ভিক্ষা করেই কোনওমতে পেট চলে। কিন্তু শনিবার ওই ভিক্ষুকের ভাঙা বাড়ি থেকেই নগদ দুই লাখ টাকা বেরিয়েছে! সংখ্যাটা কয়েক লাখ হলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
সম্প্রতি নুর ইসলামের মাটির বাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেন গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। কিন্তু এদিন ওই ভিক্ষুকের ঘরের ভিতরে ঢুকেই চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায় তাঁদের। কোথাও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে তো আবার বস্তার মধ্যে শুধুই ১০ টাকার নোট ও খুচরো পয়সা বেরোতে থাকে। যা গোনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
গ্রামের ইমামতলার কাছে নুর ইসলামের বাড়ি। বাসিন্দারা তাঁকে ছোটো বোবা নামেই ডাকেন। তাঁর দাদা লুৎফরও ভাইয়ের মতোই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছিলেন। কয়েকবছর আগে তিনি মারা যান। তাই তাঁকে গ্রামের লোকজন বড়ো বোবা নামে ডাকতেন। দুই ভাইয়েরই বিয়ে হয়েছিল। স্ত্রী, সন্তানও রয়েছে। তবে এখন আর কেউ সেখানে থাকেন না। সবাই মুক ও বধির নুর ইসলামকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি ওই ভিক্ষুকের মাটির বাড়ি একেবারে ভেঙে পড়েছিল। যে কোনও সময় মাটির দেওয়াল ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটার উপক্রম হয়। তা দেখেই এদিন গ্রামের কয়েকজন ভিক্ষুকের বাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ঘরে ঢুকতেই কয়েকটি বস্তায় খুচরো পয়সার সঙ্গে অসংখ্য ১০ টাকার নোট বেরোতে থাকে। এরপরেই এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। বাসিন্দারা ওসব ভিক্ষার দান নিয়ে পাশের ইমামতলায় বসে গোনা শুরু করে দেন। কিন্তু এত সংখ্যক খুচরো পয়সা গুনতে বাসিন্দাদের কালঘাম ছুটে যায়। টাকা গুনতে আরও অনেককেই হাত লাগাতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ মহম্মদ বলেন, গ্রামে, গ্রামে ভিক্ষা করাই নুর মহম্মদের পেশা। তাই যে, যখন টাকা পয়সা দিয়েছেন সেগুলি বাড়িতে জমা করে রেখেছেন। আসলে টাকাপয়সা যে ব্যাংকে রাখতে হয়, সেই ব্যাপারে ওঁর কোনও ধ্যান-ধারণা নেই।
অপর বাসিন্দা মহম্মদ কবীর বলেন, গ্রামের অনেকেই জানতেন যে নুর মহম্মদের কাছে টাকাপয়সা রয়েছে। কিন্তু তার পরিমাণ যে এত হবে, তা কেউ ভাবতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ওই টাকায় ওঁর জায়গাতেই একটি পাকা ঘর ও বারান্দা তৈরি করে দেওয়া হবে।