নাড়ি না কাটার সুফল, ৯ হাজার প্রসবে মা-শিশুমৃত্যু শূন্য!
বর্তমান | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ৬ মাস আগে ক্যানিং হাসপাতালে নাড়ি না কেটে সন্তান প্রসবের নতুন পদ্ধতি চালু করে ইতিহাস তৈরি করেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যদপ্তর। যদিও প্রাচীনপন্থী চিকিৎসকরা বলছিলেন, চমক দিতে চালু তো করা হল। হিতে বিপরীত হবে না তো? হিতে বিপরীত তো হল না-ই! উল্টে মিলল অসংখ্য আশ্চর্য সুফল! প্রায় ৬ মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং সহ সাত হাসপাতালে চলে এই ‘পাইলট প্রজেক্ট’। প্রায় ৯ হাজার প্রসবের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল এই নতুন পদ্ধতি। দেখা গেল, প্রসবকালে নাড়ি না কেটে প্লাসেন্টা বেরোনো পর্যন্ত অপেক্ষা করায়, একজন মায়েরও মৃত্যু হয়নি। মারা যায়নি কোনও সদ্যোজাতও। শুধু তাই নয়, সদ্যোজাতের জন্ডিস হলে ফটোথেরাপির চাহিদা ৮২ শতাংশ কমল। মায়ের পোস্ট পারটাম হেমারেজ বা প্রসব পরবর্তী মারাত্মক রক্তক্ষরণ ন্যূনতম হয়ে গেল। এমনকি, এই বিপুল সংখ্যক প্রসবে একজন সদ্যোজাতেরও ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয়নি।
প্রসঙ্গত, নীরোগ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় পুষ্ট সন্তানের লক্ষ্যে রাজ্যে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়েছিল নতুন পদ্ধতিতে প্রসব। এই ধরনের ডেলিভারিতে সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে আম্বিলিক্যাল কর্ড বা নাড়ি ছিন্ন করা হয় না। ছিন্ন বা ক্ল্যাম্পিং করা হয় তখন, যখন মায়ের গর্ভের ফুল বা প্লাসেন্টা স্বাভাবিক নিয়মে বেরিয়ে আসে। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ৪-৫ থেকে ৮-১০ মিনিট দেরিতে। মাঝের সময়টায় সন্তানকে ওই অবস্থাতেই মায়ের সংস্পর্শে ও উষ্ণতায় রাখা হচ্ছে। এমনকি, ৩২ সপ্তাহেরও কম সময়ের প্রসবে অপরিণত শিশুকে নতুন পদ্ধতিতে দ্রুত সুস্থ করতে নতুন ধরনের ট্রলির ব্যবস্থাও করে রাজ্য। অপরিণত শিশুকে প্রসবের পর ওই ‘ইনট্যাক্ট কর্ড রিসাসিটেশন ট্রলি’তে রেখে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে মেডিকেলে।
নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তক, দেশখ্যাত সদ্যোজাত শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ও রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের উপদেষ্টা ডাঃ অরুণ সিং বলেন, ‘আমরা যা করেছি, সেটিই প্রাকৃতিক নিয়ম। তাঁর দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই মডেল শুধু রাজ্য বা দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে উদাহরণ তৈরি করল।’ জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (৩) ডাঃ স্বাতী প্রামাণিক বলেন, ‘ডাঃ সিং স্যার এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মুক্তিসাধন মাইতি প্রকল্প রূপায়ণে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করায় আমরা এই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি এবং সফল হয়েছি।’
সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাত হাসপাতাল ছাড়াও চিত্তরঞ্জন সেবাসদন, কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নয়া পদ্ধতির প্রয়োগ চলছে। প্রয়োগ শুরু হয়েছে কলকাতার আরও বেশ কিছু মেডিকেল কলেজে। কলকাতা মেডিকেল এই পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ায় ৩২ সপ্তাহের কম সময়ে প্রসব হওয়া শিশুমৃত্যুর হারও কমে অর্ধেক হয়েছে। শনিবার ডাঃ সিং জানান, নাড়ি না কেটে প্রসব হওয়া শিশুরা বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকেও পুরোনো পদ্ধতির শিশুদের থেকে এগিয়ে।