মোদি জমানায় খয়রাতিতে ব্যাংকের ১৮ লক্ষ কোটি! ‘বন্ধু’ ঋণখেলাপিদের বকেয়া মকুব, আন্দোলনের পথে ক্ষুব্ধ কর্মীরা
বর্তমান | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: নরেন্দ্র মোদি জমানায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির নিট লাভের অঙ্ক তিন লক্ষ কোটি ছাড়িয়েছে। কিন্তু সেটাই আসল ছবি নয়। আদতে গত ১১ বছরে ব্যাংকগুলির কার্যকরী মুনাফার অঙ্ক প্রায় ২১ লক্ষ কোটি টাকা। তা থেকে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা সরানো হয়েছে অনাদায়ী ঋণের জন্য। অর্থাৎ যে সংস্থাগুলি মোটা টাকা ঋণ নিয়ে শোধ করেনি, তাদের বকেয়া মকুব করেছে ব্যাংকগুলি। আর সেই খয়রাতি সামাল দিতেই রাখা ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ। অনুৎপাদক সম্পদের (নন পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ) পাহাড় যাতে কমানো যায়। সরকারের এই পদক্ষেপের জেরে কমেছে ব্যাংকগুলির মোট লাভের অঙ্ক। তালিকায় নাম আছে এমন সব নামজাদা সংস্থার, যারা বিপুল টাকা ধার নিয়ে নামমাত্র পরিশোধ করেছে। বাকি অর্থ মকুব করেছে ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদি জমানায় লাগাতারভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে ঋণখেলাপিদের। কেন্দ্রের শাসক দলের ‘বন্ধু’ শিল্পপতিদের লুটের সুযোগ করে দিতেই ১৮ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া মকুবের এই খয়রাতি’। এমনটা না হলে ব্যাংকগুলির মোট লাভ প্রায় সাত গুণ বাড়ত। তাতে শেষপর্যন্ত সুরাহা হত আম জনতার।
‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়’ লাগাতার খয়রাতির বিরুদ্ধে এবার আন্দোলনে নামছেন ব্যাংক কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির আর্থিক অবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা চলেছে। একইসঙ্গে পছন্দের কর্পোরেট সংস্থাকে ‘পাইয়ে দেওয়া’র বন্দোবস্তও পাকা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নামজাদা একটি বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থার কথা। তারা ৪৮ হাজার কোটি ধার নিয়ে মিটিয়েছে মাত্র ১৯ হাজার কোটি। আবার একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা ৪৬ হাজার কোটি ঋণের মাত্র ২ হাজার ৯০০ কোটি শোধ করেছে। ২২ হাজার কোটি ধার নিয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা মেটানোর রেকর্ড আছে এক জাহাজ প্রস্তুতকারক সংস্থার। বাকি টাকা মকুব। এসবের জেরেই ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ব্যাংকগুলির ২১ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকার কার্যকরী মুনাফা নেমে এসেছে ৩ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকার নিট লাভে।
অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘যদি ওই ১৮ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা হিসেবে আসত, তার প্রাপ্য লভ্যাংশ জনমুখী প্রকল্প বা পরিকাঠামো তৈরিতে ব্যবহার করতে পারত সরকার। ব্যাংকগুলিও সার্ভিস চার্জের বোঝা কমাতে সক্ষম হত। আমানতে আরও একটু বেশি সুদ দিয়ে আম জনতার সঞ্চয়ের বহর আরও বাড়ানো যেত। কিন্তু ব্যাংকগুলি নিজেদের ভালো আর্থিক অবস্থার প্রমাণ দিতে হিসেবের খাতা থেকে ওই অনাদায়ী ঋণের অঙ্ককে ছেঁটে ফেলছে। মুনাফা থেকে বড় অঙ্কের টাকা সরিয়ে রাখা হচ্ছে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা কমানোর জন্য। আমাদের বক্তব্য, সরকার কেন সরাসরি টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে না? এই লুটের মানসিকতার বিরোধিতা করেই আমরা আন্দোলনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছি।’