• বঙ্গ-ভোটে বুঝেশুনে ব্যবহার হিমন্তকে
    আনন্দবাজার | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • গত দু’দফার লোকসভা ভোট ও গত বারের বিধানসভা ভোটের সময়ে তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে অসম বিজেপির প্রচার দলের অন্যতম প্রধান মুখ। ২০১৯ সালে ৫টি ও গত বার বঙ্গের ১০টি লোকসভা আসনে তিনিই ছিলেন প্রচারের ইন-চার্জ।

    কিন্তু গত এক বছরে অসম থেকে ডি-ভোটারের চিঠি পৌঁছেছে বঙ্গবাসীর, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের অনেক ঘরে। ফলে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার তারকা প্রচারকের জ্যোতি ম্লান হয়েছে বইকী। জ়ুবিন গর্গের মৃত্যু-পরবর্তী জটিলতা, শর্মা পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে নিজের রাজ্যেও পরিস্থিতি জটিল। সামনের বছর একই সঙ্গে ভোট অসম ও পশ্চিমবঙ্গে। সে ক্ষেত্রে, হিমন্ত গদি সামলে বঙ্গে প্রচারে যেতে কতটা সময় পাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দলীয় সূত্রে খবর, দিল্লিও হিমন্তকে পশ্চিমবঙ্গে বুঝেশুনে ব্যবহারকরতে চাইছে।

    গত কয়েক মাসে হিমন্ত বেপরোয়া ভাবেই মুসলিম-বিরোধী মন্তব্য করেছেন। অসম পুলিশ রাতবিরেতে বাড়িতে চড়াও হয়ে, বাস ভরে মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর যে ব্যবস্থা করেছে, তা-ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। এবং সম্প্রতি ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে তাঁর গায়ে বাঙালি-বিরোধী তকমা বসেছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির প্রচার বিভাগের এক নেতা বলেন, হিমন্ত তারকা প্রচারক থাকবেন। কিন্তু তাঁর ‘পরিবর্তিত ভাবমূর্তি’ বিবেচনা করে প্রচারের এলাকা বেছেনেওয়া হবে।

    উত্তরবঙ্গে কোচ-রাজবংশী ভোট বিজেপির বড় জোর। সেখানে হিমন্তের যাওয়ার কথা। যাবেন ধুবুড়ির অশ্বিনী রায় সরকার। কোচ-রাজবংশীদের অনেকের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়ায় এবং অসমে তাঁরা জনজাতির মর্যাদা না পাওয়ায় অসন্তোষ থাকলেও হিমন্ত ঘোষণা করেছেন, রাজবংশীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফরেনার্স ট্রাইবুনালে থাকা ২৮ হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং আর কোনও কোচ-রাজবংশীর বিরুদ্ধে ডি-ভোটারের মামলা দায়ের হবে না। কেএলও নেতা জীবন সিংহকেও নিজের জিম্মায় রেখে দিয়েছেন হিমন্ত।

    অসম বিজেপির তরফে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে থাকার কথা বরাকের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল ও কৌশিক রাই, সাংসদ পরিমল শুক্ল বৈদ্য, রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘু বোর্ডের চেয়ারপার্সন শিলাদিত্য দেব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালেরও। চা বাগান এলাকায় যাবেন মন্ত্রী রূপেশ গোয়ালা ও সাংসদ কামাখ্যাপ্রসাদ তাসা। হিন্দিভাষী এলাকায় পাঠানো হতে পারে মন্ত্রী অশোক সিঙ্ঘলকে। সিঙ্ঘলই বিহারের ফল প্রকাশের দিনে কপিখেতের ছবি দিয়ে ভাগলপুরে সংখ্যালঘু-হত্যার স্মৃতি উস্কে দিয়েছেন। বিহারে ভোটে জেতা প্রাক্তন এসপি আনন্দ মিশ্রকেও পশ্চিমবঙ্গের প্রচারে ব্যবহার করা হতে পারে। উত্তরপাড়ায় জন্মানো ও বড় হওয়া, কলকাতায় লেখাপড়া করা আইপিএস আনন্দ হিমন্তের কথাতেই চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)