ব্যস্ত ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। টানা গাড়ি চলছে। পাশাপাশি, আশপাশের এলাকার অনেকে হেঁটেও যাতায়াত করেন। সেখানেই পথের পাশে পড়ে রয়েছে সিরিঞ্জ, গ্লাভস, স্যালাইনের বোতলের মতো বর্জ্য। এ ছবি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরের। কে বা কারা এগুলি ফেলে তা জানেন না স্থানীয়েরা। এ ধরনের বর্জ্য থেকে ক্ষতির কথাও জানেন না তাঁরা। যদিও শঙ্কায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানান, এই চিকিৎসাজাত বর্জ্য (বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট) তিন ধরনের হয়। তুলো, গজ, কাপড়, ন্যাপকিন, অস্ত্রোপচারের পরে দেহাংশের মতো জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য। ওষুধের বোতল, প্যাকেট, সিরিঞ্জ ও সূচের মতো জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নোংরা জল, তরল, নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধের মতো তরল বর্জ্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পলাশ দাসের মতে, ‘‘বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য পদার্থের ঠিক ভাবে ব্যবস্থা করা না হলে তা পরিবেশের পক্ষে যথেষ্ঠ ক্ষতিকর। এখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, করোনা এ ভাবে ছড়াতে পারে।’’ সূত্রের খবর, এ ধরনের বর্জ্যের জন্য স্বাস্থ্য জেলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। কিন্তু তার পরেও মেডিক্যাল কলেজ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এ ভাবে বর্জ্য পড়ে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নোডাল অফিসার অমিতাভ সাহা বলেন, ‘‘সম্প্রতি স্বাস্থ্য জেলার অধীন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সমস্ত বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ধরনের বর্জ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত সংস্থা সমস্ত বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করবে।’’ অমিতাভ জানান, বেসরকারি নার্সিংহোম, বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলির এ ধরনের ব্যবস্থা থাকার কথা। না হলে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট আইন অনুযায়ী এদের অনুমোদন মেলে না।
রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে জানান, সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের বর্জ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নিয়মিত সংগ্রহ করে। জাতীয় সড়কের ধারে বা হাসপাতালের চত্বরে এ বর্জ্য ফেলে রাখা যায় না। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষাগারগুলিও রাস্তার ধারে এ ধরনের বর্জ্য ফেলতে পারেন না। শোভন বলেন, ‘‘তার পরেও কে বা কারা এ ভাবে বর্জ্য ফেলে রাখছে তা তদন্ত করে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে যারা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’’ রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও অঙ্কুর মিত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে দেখতে বলা হবে।’’