বর্তমানে প্রতিবেশী দেশগুলির উত্তাল পরিস্থিতিতে উদ্বেগে ভারত সরকার। দেশের সীমান্ত এলাকা নিয়ে চিন্তিত দিল্লি। তার মধ্যে দেশের রাজধানী দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পর সেই চিন্তা যে বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই আবহে সীমান্তের এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে সরকার। তেমনি বাংলার ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা জোরদার করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সীমান্ত এলাকাগুলিতে নজরদারি দ্বিগুন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ‘চিকেনস নেক’-এ নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য শনিবার শিলিগুড়ির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা এসআইবি-র দপ্তরে হাই লেভেল স্ম্যাকের (স্টেট সাবসিডারি মাল্টি এজেন্সি সেন্টার) তরফে বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
শনিবার আয়োজিত এই বৈঠকে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই বৈঠকে এদিন উপস্থিত ছিলেন, সিআইএসএফ, বিএসএফ, এসএসবি, আইটিবিপি, আরপিএফ, ভারতীয় সেনা, ভারতীয় বায়ুসেনা, কেন্দ্রীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, এশিয়ান হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ, মিলিটারি পুলিশ, আর্মি ইন্টেলিজেন্স, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, জিআরপি-সহ একাধিক নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকরা। এর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ যাদব, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর, উত্তর-পূর্ব রেলের প্রতিনিধি এবং ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। এদিনের বৈঠক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর। তিনি বলেন, ‘এটি একটি রুটিন বৈঠক। সংবাদমাধ্যমে বলার নয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক প্রকাশ্যে বলার কিছু নেই।’
উত্তরবঙ্গের চিকেনস নেক-কে ঘিরে রয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সীমান্ত। বাংলাদেশ, নেপালের মতো দেশের সীমানা রয়েছে এই এলাকা জুড়ে। সেকারণে এলাকাটির গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে দেশের ও প্রতিবেশী দেশগুলির উত্তাল অবস্থা। নেপাল সরকারের বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন, আবার বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ যে গণআন্দোলনের রূপ নিয়েছিল তখন থেকেই ভারতের সীমান্তে তৎপর হয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের তরফে শেখ হাসিনার ফাঁসি ঘোষণার পর থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত দু’মাসে ইন্দো-নেপাল সীমান্ত থেকে ৪১ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করেছে এসএসবি।
তিনজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য হওয়ার অভিযোগে ভারতীয় সেনার বাগডোগরার ব্যাঙডুবি সেনা ছাউনি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্যদিকে, ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গরুপাচারকারী ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ১৯ জনকে গত তিনমাসে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএফ।
বাংলাদেশ ও নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাদেও সম্প্রতি দেশের রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। দিল্লির বিস্ফোরণের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘চিকেনস নেক’-এ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন। চিকেনস নেকে’র সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বিএসএফ, সিআরপিএফ, আইটিবিপি, এসএসবি এবং সিআইএসএফ-এর মত বিভিন্ন আধাসেনা বাহিনীকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিকেনস নেকের সুরক্ষার জন্য হাসিমারা এবং বাগডোগরার বিমানঘাঁটিকেও তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিকিমের সঙ্গে থাকা চিন সীমান্ত এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সীমান্তের সুরক্ষায় থাকা সেনাবাহিনীর ত্রিশক্তি কোরকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পাহাড়ের উপরের অংশে নজরদারি চালানোর জন্য ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এছাড়াও ধুবড়ির কাছে বামুনি, কিষণগঞ্জ এবং চাপড়ায় তিনটি সামরিক ঘাঁটি তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজের গতি বৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এদিন বৈঠকে এসআইআর-এর প্রসঙ্গও উত্থাপিত হয়েছে।
এসআইআর শুরু হওয়ার পর অনুপ্রবেশকারী প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিভিশনাল সেফটি কমিশনার সন্দীপ কুমার বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সমস্ত নিরাপত্তা সংস্থা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিল। মূলত, এই বৈঠকে প্রত্যেক নিরাপত্তা সংস্থা নিজেদের নিরাপত্তা ও নজরদারি সংক্রান্ত কিছু পরামর্শ রেখেছে। শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’