ছ’মাসে এসেছেন ৯০ লক্ষ ভক্ত! প্রণামী থেকে দৈনিক আয় বিপুল, দিঘার জগন্নাথ ধাম পর্যটনকেন্দ্র থেকে এখন ‘আত্মনির্ভর’ তীর্থস্থান
আনন্দবাজার | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
মাস ছয়েক আগেও দিঘা ছিল শুধুই পর্যটনকেন্দ্র। হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ দিঘায় আসতেন সমুদ্র সৈকতের টানে! কিন্তু এখন দিঘা শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং তীর্থস্থান!
বহু পুণ্যার্থী ভিড় করছেন দিঘায়। সৌজন্যে দিঘার জগন্নাথ ধাম। অনেকেই বলছেন, দিঘা এখন ‘আত্মনির্ভর’ তীর্থস্থান!
মাস ছয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দ্বারোদ্ঘাটন হয় দিঘায় তাঁর স্বপ্নের জগন্নাথ মন্দিরের। পুরীর আদলে জগন্নাথ মন্দির তৈরি হওয়ায় আলোচনা কম হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বিতর্কও হয়েছে অনেক। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ধাম বলা যায় কি না, তা নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া হয়েছে। মামলা হয়েছে আদালতেও। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে প্রসাদ নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে। তবে এত কিছুতে যে ভক্তদের মনে কোনও দাগ কাটেনি, তা ছ’মাসে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পুণ্যার্থীদের আগমনের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, গত ছ’মাসে প্রতি দিন গড়ে ৫০ হাজার ভক্তের ভিড় হয়েছে জগন্নাথ ধামে। মন্দিরের অছি পরিষদের সদস্য রাধারমণ দাস জানান, দ্বারোদ্ঘাটনের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৯০ লক্ষেরও বেশি ভক্ত জগন্নাথ মন্দির দর্শন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি দিন বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমাগম হয়। উৎসবের দিনগুলিতে সেই ভিড় আরও বেড়ে যায়। গত ৬ মাসে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ৯০ লক্ষের বেশি মানুষের আগমন হয়েছে। যা এই মন্দিরকে জনপ্রিয়তম এক নতুন তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।’’
ভক্ত সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ভাবে সচ্ছল হয়ে উঠেছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। রাধারমণের কথায়, ‘‘ভক্ত সমাগমই জগন্নাথ মন্দিরকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তুলেছে।’’ গত ছ’মাসে কত আয় হয়েছে মন্দিরের? তার আভাসও দিয়েছেন রাধারমণ। গত ৬ মাসের গড় হিসেবে মন্দিরের দৈনিক আয়ের হিসাব কী, তা জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দেওয়া দৈনিক আয়ের হিসাব অনুযায়ী, হুন্ডিতে নগদ জমা পড়ে এক লক্ষ টাকা। অনুদান এবং উপহার হিসাবে ট্রাস্ট পায় প্রায় এক লক্ষ টাকা। আর ভোগের প্রসাদ এবং অন্যান্য প্রসাদ বিক্রি থেকে দৈনিক আয় প্রায় দু’লক্ষ টাকা। এই হিসাবে মন্দিরের মোট দৈনিক আয় এখন প্রায় ৪ লক্ষ টাকা!
অনেকের মতে, দৈনিক যা আয় হয়, তা প্রমাণ করে , দিঘার জগন্নাথ মন্দির আর্থিক ভাবে অনেকটাই আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, জগন্নাথ মন্দির গড়ে ওঠার ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, তার একটা ছবিও তুলে ধরেছেন রাধারমণ। তিনি জানান, মন্দিরের সেবা এবং নিরাপত্তা, সাফাইকর্মী, হাউস কিপিং মিলিয়ে প্রায় ১৭০ জনকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
শুধু কি মন্দিরে কর্মসংস্থান? মন্দির ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোটবড় অনেক ব্যবসা। অনেকেই মন্দির কেন্দ্র করে ছোট-বড় নানা কাজ করে রোজগার করছেন। সেই আয়েই চলছে সংসার। বড় উৎসবে ভক্ত সমাগম বাড়লে যেমন মন্দিরে ভাঁড়ারে আয় বাড়ে, তেমনই সুদিন দেখেন ব্যবসায়ীরা।
দিন কয়েক আগেই রাসপূর্ণিমা শেষ হয়েছে। আর এই উৎসবে বিপুল সংখ্যক ভক্তের আগমন হয়েছিল দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে। মন্দির সূত্রে খবর, রাস উৎসবে ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে। শুধু এ রাজ্যের বাসিন্দারা নন, ভিন্রাজ্য থেকে বহু ভক্ত আসেন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে। ভক্তদের একাংশের মতে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, ভবিষ্যতে রথযাত্রা এবং অন্য বড় উৎসবগুলিতে এই মন্দিরে আরও বেশি ভক্ত সমাগম হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় মুখ্যমন্ত্রী দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মন্দিরটি নির্মাণ হলেও উদ্বোধনের পর মন্দিরটিকে জগন্নাথ ধাম ‘কালচারাল সেন্টার’ নামের ট্রাস্টের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতার ইসকনের রাধারমণ দাসকে মন্দির পরিচালনার গুরুদায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। এই মন্দিরকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে মন্দির চত্বরে ‘জগন্নাথ ধাম পুলিশ আউট পোস্ট’ও তৈরি করা হয়েছে। এত কিছু থেকেই প্রমাণ করছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির কী ভাবে ভক্তদের মনে দাগ কেটেছে।