আজকাল ওয়েবডেস্ক: চোপড়া ব্লকে এসআইআর সংক্রান্ত অতিরিক্ত কাজের চাপে এবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন এক বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)। অসুস্থ অবস্থাতেই হাসপাতালের বেডে বসে এনুমারেশন ফর্ম আপলোড করতে দেখা গেল তাঁকে। ঘটনাটি সামনে আসতেই প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
চোপড়া ব্লকের জাগিরবস্তি এলাকার ১৮৮ নম্বর বুথের বিএলও মুস্তফা কামাল জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তিনি টানা পরিশ্রম করছেন। মোট ৯১৮টি ফর্ম বিলি করতে হয়েছে তাঁকে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ, তার পর রাতে জেগে সেই ফর্ম আপলোড দুইয়ের চাপেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। ইতিমধ্যেই অর্ধেকের বেশি ফর্ম আপলোড করা হয়ে গেছে। তবে দৌড়ঝাঁপ, মানসিক চাপ ও বিশ্রামের অভাবে শরীর ভেঙে পড়ে তাঁর।
মুস্তফা কামাল বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই শরীরটা ভাল লাগছিল না। পা ফুলে গিয়েছিল, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল। তবুও কাজ থামাইনি। ভেবেছিলাম নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজ সকাল থেকে উঠে বসার মতো শক্তিও ছিল না।” বাধ্য হয়েই তাঁকে এদিন ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অসুস্থ অবস্থাতেও কীভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশ্ন উঠতেই তিনি বলেন, “কী আর করার আছে? দায়িত্ব তো সামলাতেই হবে। গতকাল পর্যন্ত জমা পড়া ফর্মগুলো ফেলে রাখলে সমস্যা হবে। তাই যতটা পারছি হাসপাতালে বসেই আপলোড করছি।” তিনি আরও জানান, তাঁর অসুস্থতার খবর সুপারভাইজারকে জানানো হয়েছে। সুপারভাইজার আশ্বস্ত করেছেন যে বাকি কাজ সামলানোর ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে, ওই বিএলও-র ছেলে জানান, “বাবা টানা রাত জেগে কাজ করছিলেন। দিনের বেলা বাড়ি বাড়ি যাওয়া, রাতে আপলোড এই চাপে শরীর ভেঙে পড়েছে। সকালে আর ধরে রাখতে পারেননি। তাই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করি।” স্থানীয় মহল ও সহকর্মীদের দাবি, এত বিশাল কর্মভার সামলাতে গিয়ে একের পর এক বিএলও-রা চরম মানসিক ও শারীরিক চাপের মুখে পড়ছেন। অনেকেই যথেষ্ট বিশ্রাম পাচ্ছেন না। ফলে শরীরিক অসুস্থতা বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, এসআইআর কাজের চলতি পর্যায়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিরিক্ত চাপ, পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাব এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বাড়ি বাড়ি ঘোরার অভিযোগ উঠে আসছে। এই ঘটনার পর প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন উঠেছে বিএলওদের কাজের চাপ কমাতে কি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? চোপড়ার এই ঘটনা রীতিমতো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মাঠে থাকা কর্মীদের উপর চাপ কতটা প্রকট হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গেই বিএলও-র দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও অনেকে। মা অসুস্থ হয়ে পড়ায়, বিএলও-র দায়িত্ব সামলাতে দেখা গেছে এক কিশোরকে। অসুস্থ মা। তাই এসআইআর-এর জন্য বিএলও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছে কিশোর ছেলে। ছেলেই সই করছে রিসিভ কপিতে। তাতেই আতঙ্ক বাঁধছে এসআইআর ফর্ম জমা দিতে আসা ভোটারদের মধ্যে।
ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের গড়ালবাড়ি ১৭ /১৮০ নম্বর পোলিং স্টেশন, খান সাহেব পাড়া এলাকায়। গত দিন দশেক থেকে এই এলাকার দায়িত্বে থাকা বুথ লেভেল অফিসার আঞ্জুয়ারা বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ রয়েছেন। তাই এলাকার ভোটারদের কাছ থেকে এনুমারেশন ফর্মের কপি জমা নিচ্ছেন তাঁর ছেলে আরিফ রহমান।