• বিএলও-র বাড়ি গিয়ে জোর করে SIR ফর্ম পূরণ ‘বাংলাদেশি’ লাভলির! ফের বিতর্কে প্রাক্তন প্রধান
    প্রতিদিন | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • বাবুল হক, মালদহ: বাংলাদেশ থেকে এপার বাংলায় এসে মাত্র আট বছরের মধ্যেই জনপ্রতিনিধি! তিনি হয়ে যান পঞ্চায়েত প্রধানও। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রথমে প্রশাসনিক তদন্তে বাতিল হয় তাঁর জাল ওবিসি শংসাপত্র। প্রধান পদ খারিজ হয়ে যায় সেই ‘বাংলাদেশি’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়া নেত্রী লাভলি খাতুনের। এবার এসআইআর চলাকালীন সেই লাভলি খাতুনের এ্যনুমারেশন ফর্ম পূরণ করা নিয়েও উঠল বিতর্ক। এসআইআর চলাকালীন অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে রাজ্যে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে যখন তরজা তুঙ্গে, ঠিক তখনই ফের লাভলি খাতুনকে ঘিরে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। চাপানউতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও।

    বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযুক্ত মালদহের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধানের এ্যনুমারেশন ফর্ম ৫৩ নম্বর বুথে আপলোড এবং ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। দাবি ছিল, তাঁকে পুশব্যাকের। কিন্তু সেই লাভলি খাতুন ফর্ম ফিলাপ করলেন কিভাবে? ওই বুথের বিএলও মুজিবর রহমান আসলে লাভলির ভাসুর বলে জানা গিয়েছে। বিএলও-র দাবি, সব জেনে বুঝেই তিনি কার্যত বাধ্য হয়েছেন সেই ফর্ম আপলোড করতে। লাভলি তাঁর বাড়িতে গিয়ে সেই ফর্ম পুরণ করিয়ে আপলোড করিয়েছেন। এই বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন বিএলও। ফলে লাভলিকে নিয়ে ফের শোরগোল পড়ে গিয়েছে মালদহে। যদিও লাভলি খাতুনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

    উল্লেখ্য, হরিশ্চন্দ্রপুরের এই লাভলি খাতুন নাকি বাংলাদেশের নাগরিক! তাঁর বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ওঠে। তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকে একাধিক জাল শংসাপত্রের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিক সেজে ভোটে দাঁড়িয়ে প্রধান হয়ে যান বলেও অভিযোগ তোলা হয়। এনিয়ে বছর খানেক ধরে মামলাও চলে কলকাতা হাইকোর্টে। উচ্চ আদালতের তরফে মহকুমা শাসককে শুনানির মাধ্যমে বিষয়টি দেখতে বলা হয়। চাঁচোলের তৎকালীন মহকুমা শাসক শৌভিক মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত প্রধানের নামে শোকজ নোটিশও ইস্যু করেছিলেন। সেই সময় মহকুমা শাসক জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর ওবিসি শংসাপত্র জাল হলে কেন তাঁর প্রধান পদ বাতিল করা হবে না? কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভলি খাতুনের কাছ থেকে তার জবাব মেলেনি। লাভলি খাতুনের সদস্যপদ খারিজের নির্দেশ দেন তৎকালীন মহকুমা শাসক শৌভিক মুখোপাধ্যায়। সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানকে চার্জ বুঝিয়ে দেন।

    অভিযোগ ছিল, লাভলি খাতুন ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগদান করে প্রধান পদে বসেন তিনি। প্রধান পদটি ছিল ওবিসি মহিলা সংরক্ষিত। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত রাহেনা সুলতানা-সহ আরও চারজন প্রশাসনের কাছে লাভলির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। হাইকোর্টেও মামলা করেন তাঁরা।

    অভিযোগকারীদের দাবি ছিল, লাভলির আসল নাম ‘নাসিয়া শেখ’। বাড়ি বাংলাদেশে। পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে তিনি ভারতে ঢোকেন। তারপর নিজের পূর্ব পরিচয় নষ্ট করে ফেলেন। বাবার নামও নাকি বদলে ফেলেন তিনি। ২০১৫ সালে ভারতে তাঁর ভোটার কার্ড ইস্যু হয়। ২০১৮ সালে ইস্যু হয় জন্ম সার্টিফিকেট। সেই নথিতে নাসিয়ার বাবার নাম ছিল শেখ মুস্তাফা। কিন্তু অভিযোগ, লাভলির বাবার নাম শেখ মুস্তাফা নয়। বাবার আসল নাম জামিল বিশ্বাস। এমনকী ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রারেও শেখ মুস্তাফার পরিবারে লাভলির কোনও অস্তিত্ব নেই। শেখ মুস্তাফাকে ‘মিথ্যা’ বাবা সাজিয়ে সরকারি নথিপত্র তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ। মুস্তাফাকে হাইকোর্টে তলবও করা হয়। কিন্তু বারবার ডাকা সত্ত্বেও তিনি হাজিরা দেননি। ফলে সেই সময় পঞ্চায়েত প্রধানের পদেই রয়ে যান ‘বাংলাদেশের নাসিয়া’। ওবিসি সার্টিফিকেট জাল প্রমাণিত হওয়ায় খারিজ হয়েছে প্রধান পদ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)