• ১০ বছর আগে হওয়া দুর্ঘটনার জেরে ‘পাথর’ হল অণ্ডকোষ! বাঁকুড়ায় বিরল রোগে আক্রান্ত ইউসুফ
    প্রতিদিন | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ১০ বছর আগে হওয়া দুর্ঘটনার জেরে ‘পাথর’ হয়ে গেল অণ্ডকোষ!  অপারেশন করে তা বাদ দিতে হল। বর্তমানে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন জেলার রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ ইউসুফ শেখ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গত ১০ বছর আগে সাইকেল নিয়ে দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েন ইউসুফ। সেই সময় তাঁর অণ্ডকোষে আঘাত লাগে। কিন্তু লজ্জা ও সংকোচে কাউকে কিছু বলেননি তিনি। ধীরে ধীরে তা ভয়াবহ আকার নেয়। চিকিৎসকদের কথায়, শক্ত হতে হতে তাঁর বামদিকের অণ্ডকোষ একসময় পুরোপুরি জমাট হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে টেনে ধরা ব্যথা, পরে পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই ব্যক্তি।

    হাসপাতালের এমএসভিপি অর্পণ গোস্বামী জানাচ্ছেন, ”ইউসুফ পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই ধরা পড়ে অস্বাভাবিক চিত্র। দেখা যায়, বামদিকের অণ্ডকোষটি পুরোপুরি ক্যালসিফাই হয়ে ‘পাথরে’র মতো শক্ত হয়ে গিয়েছে।”

    এমএসভিপির কথায়, ”দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় আগে টিস্যুতে রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মৃত টিস্যু জমে ক্যালসিয়ামের স্তর তৈরি হওয়ায় অণ্ডকোষটি একেবারে একখণ্ড পাথরের মতো হয়ে ওঠে। বিপদ বাড়ার আগেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং সেই অণ্ডকোষটি কেটে বাদ দেওয়া হয়।” অস্ত্রোপচারের পর বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন ইউসুফ।

    ওই চিকিৎসকের কথায়, ”এই অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় টেস্টিকুলার ক্যালসিফিকেশন বলা হয়। যা অত্যন্ত বিরল এবং বিপজ্জনক। দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ আঘাত কিংবা অস্বাভাবিক চাপ টিস্যুর মৃত্যু ঘটায়। সেই মৃত টিস্যুতেই শরীর ক্যালসিয়াম জমাতে থাকে, ফলে ধীরে ধীরে অণ্ডকোষ শক্ত হয়ে পড়ে।” লুকিয়ে রাখার ফলে এর ফলে শরীরে একাধিক সমস্যায় দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা হাসপাতালের এমএসভিপি অর্পণ গোস্বামীর। তিনি বলেন, ”এক্ষেত্রে প্রথমে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এরপর ধীরে ধীরে আশেপাশের নার্ভে চাপ পড়তে শুরু করে। একটা সময় হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।” শুধু তাই নয়, মৃত টিস্যু সংক্রমণের বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায়। একবার সংক্রমণ ছড়ালে রক্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য চিকিৎসকের।

    কিন্তু কীভাবে বুঝবেন বিরল রোগে আক্রান্ত? চিকিৎসকের কথায়, ”স্ক্রোটামে ভারীভাব, ফুলে যাওয়া এবং টেনে ধরা ব্যথা সাধারণ লক্ষণ। আর দুই দিকেই যদি সমস্যা হয় তাহলে প্রজননক্ষমতার উপরেও এর প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘদিন ক্যালসিফিকেশন থাকলে ভবিষ্যতে টিউমার হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়” এই প্রসঙ্গে আরও এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, লজ্জা বা সংকোচের কারণেই বহু রোগী এই ধরনের উপসর্গ লুকিয়ে রাখেন। ফলে চিকিৎসা দেরি হয়, আর ছোট আঘাতও বিপজ্জনক জটিলতায় পরিণত হতে সময় লাগে না। তাঁদের স্পষ্ট বার্তা—অন্ডকোষে ব্যথা, শক্ত হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে দ্রুত চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া উচিত।
  • Link to this news (প্রতিদিন)