• রাত জেগে এসআইআরের কাজ, ‘অত্যধিক চাপে’ অসুস্থ বাংলার একাধিক BLO
    প্রতিদিন | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: এসআইআরের কাজে অত্যধিক চাপের অভিযোগ। ইতিমধ্যে একাধিক বিএলও প্রাণহানির মতো চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার রাজ্যে অসুস্থও কেউ কেউ। তাঁরা ভর্তি হাসপাতালে। নির্বাচন কমিশন দুষছে তাঁদের পরিবার। 

    হাবরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক বিএলও। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার মছলন্দপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন দাস। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। পরিবারের দাবি, অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে পারছিলেন না সুমনবাবু। প্রায় প্রতি রাত জেগে কাজ করছিলেন। তার ফলে ঠিকমতো ঘুম হচ্ছিল না। গত কয়েকদিন ধরে কথাবার্তা বলাও প্রায় বন্ধ করে দেন। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলেই দাবি পরিবারের। রবিবার দুপুরে এক ব্যক্তি এনুমারেশন ফর্ম বাড়িতে জমা দিতে আসেন। সেই সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে হাবরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন অসুস্থ বিএলও।

    কাটোয়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৭ নম্বর বুথের বিএলও সুখদেব দাস রবিবার সকাল থেকেই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। কাটোয়া হাসপাতালের চিকিৎসক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর চিকিৎসা করেন। সোমনাথবাবু বলেন,” ইসিজি করা হয়েছে। গুরুতর কিছু ধরা পড়েনি। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল। আপাতত রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” কাটোয়ার ঘোষহাটের বাসিন্দা সুখদেব দাস পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী,এক সন্তান। স্ত্রী উষাদেবীও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ঊষাদেবী বলেন,”আমার স্বামীকে টানা দুসপ্তাহ ধরে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সারারাত জেগে ভোর চারটে পর্যন্ত এস আই আরের অনলাইনের কাজ সেরে সামান্য বিশ্রাম নেন। ফের সকাল আটটার মধ্যে খাওয়া দাওয়া করে যখন বেরোনোর জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তখনই বলেন বুকে যন্ত্রণা করছে। চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন ডেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। দেখা যায় ব্লাডপ্রেসার ১৯৫/১১০ উঠে গিয়েছে। অথচ আমার স্বামীর কোনোদিনই হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা ছিল না।”

    এদিন সুখদেববাবু হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে বলেন, “রোজই টার্গেট বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বাইরে ঘুরে ঘুরে ৮-৯ ঘন্টা কাজ করার পরেও বাড়িতে গড়ে ১৫০-১৭০ করে ফর্ম ডিজিটাইজড করতে হচ্ছে। দু চারদিন এমন চাপ নেওয়া সম্ভব। কিন্তু টানা চলছে। সামান্য বিশ্রাম পাচ্ছি না। কোথায় বা জানাব?” কাটোয়ার মহকুমাশাসক অনির্বাণ বসু বলেন,”ঘটনার কথা শুনেছি। ওই বিএলও-কে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন স্থিতিশীল রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার সুপারভাইজার ওঁর সঙ্গে রয়েছেন। আপাতত ওঁর শারিরীক সমস্যা তেমন নেই। যদি শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ওই জায়গায় বিকল্প কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।”

    এসআইআরের কাজ করছিলেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১০৯ নম্বর বুথের বিএলও তনুশ্রী হালদার নাইয়া। তিনি বারুইপুরের সূর্যপুর নাচন গাজা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সূত্রের খবর, শনিবার রাতে এসআইআরের কাজ করার সময় মাথা ঘুরতে থাকে। অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সেই সময় তাঁকে সকলে উদ্ধার করে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ভর্তি বিএলও। একই অবস্থা জঙ্গিপুরের বিএলও-র। অতিরিক্ত কাজের চাপে জ্ঞান হারান জঙ্গিপুরের এক বিএলও। শনিবার জঙ্গিপুর বিধানসভার ১৩৭ নম্বর বুথের বিএলও কৌশিক ঘোষ। তিনিও বর্তমানে ভর্তি হাসপাতালে। বলে রাখা ভালো, শনিবারই কৃষ্ণনগরে কাজের চাপে এক মহিলা বিএলও আত্মহত্যা করেন বলেই দাবি পরিবারের। তারপর X হ্যান্ডেলে আরও একবার সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও কতজনের মৃত্যু হলে নির্বাচন কমিশনের হুঁশ ফিরবে, সে প্রশ্ন করেন তিনি। তারপরেও একের পর এক বিএলও-র অসুস্থতায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে কমিশন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)