• পূর্ণ মর্যাদায় শেষকৃত্য উইং কম্যান্ডারের, আকাশে ওড়ার সঙ্গীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্ত্রী
    এই সময় | ২৩ নভেম্বর ২০২৫
  • টুপিটা সামনের দিকে নামানো। চোখটা যেন ঢাকার চেষ্টা করছেন। টুপির আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে থমথমে মুখটা। মেয়ের হাত ধরে উইং কম্যান্ডার নামাংশ স্যালের কফিনবন্দি দেহের সামনে এসে দাঁড়ালেন আফসান। তিনিও ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট, উইং কম্যান্ডার। কবজির মোচড়ে যুদ্ধবিমান চালানোয় দু’জনেই সিদ্ধহস্ত। হাতে হাত রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তেন শত্রুর উপরে। নামাংশ শুধু তাঁর স্বামী নন, একসঙ্গে আকাশে ওড়ার সঙ্গীও। কফিনের সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন আফসান। স্যালুট করলেন। পরক্ষণেই ভেঙে পড়লেন হাউহাউ কান্নায়।

    রবিবার বিকেলে হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় এসে পৌছয় নামাংশের দেহ। বাড়ির বাইরে রাখা হয় কফিন। তার উপরে নামাংশের একটি ছবি। ফুল-মালায় সাজানো। ধুপ জ্বলছে। দুবাইয়ের এয়ার শো-তে প্রদর্শনীর সময়ে ভেঙে পড়ে যুদ্ধবিমান তেজস। সেই বিমানেরই পাইলট ছিলেন উইং কম্যান্ডার নামাংশ স্যাল। ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে ইজেক্ট করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু উচ্চতা কম থাকায় আর সম্ভব হয়নি।

    এয়ার শো-র আগে বাবা জগন নাথকে বলেছিলেন, ‘ইউটিউবে চোখ রেখো, আমাদের কেমন পারফর্ম্যান্স হচ্ছে দেখতে পাবে।’ জগনও হয়তো গ্রামের লোকেদেরও বলেছিলেন, এয়ার শো-তে আমার ছেলে কসরত দেখাবে, তোমরা দেখো। গর্বিত পিতা যেমনটা বলেন আর কী! ইউটিউবেই এয়ার শো-র ভিডিয়ো দেখতে দেখতেই তেজস ভেঙে পড়ার খবর পান জগন। ধীরে ধীরে জানতে জানতে পারেন ছেলের মৃত্যুর কথা।

    এ দিন নামংশের দেহ নিয়ে গ্রামে যান বায়ুসেনার অফিসাররা। খবর পাওয়া মাত্র ভিড় করে আসে গোটা গ্রাম। প্রত্যেকেই একবার দেখতে চায় গ্রামের ছেলেকে। ছুঁতে চায় তাঁর কফিন। এই গ্রামের বীর সন্তান তিনি। অনেকেরই চোখে জল। একে একে এসে ফুল, মালা দিলেন তাঁরা। সবার শেষে মেয়ের হাত ধরে এলেন আফসান। পরনে বায়ুসেনার পোশাক। টুপিটা সামান্য নীচের দিকে নামানো।

    সব ঠিকঠাকই ছিল। আফসাও বায়ুসেনার দক্ষ অফিসার। ইস্পাত কঠিন মন তাঁরও। কিন্তু একসঙ্গে আকাশে ওড়ার সঙ্গীকে শেষবার দেখাটা কতটা কষ্টের, তা বোধহয় তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। নামাংশকে একবার ভালো করে দেখলেন তিনি। হয়তো ভাবলেন, যে একবার উড়তে শিখেছে, তার কী আর পৃথিবীর মাটি ভালো লাগে?

    নিজেকে সামলাতে পারলেন না আফসান। ফুঁপিয়ে উঠলেন। তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন আর এক অফিসার। আফসানার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললেন তিনি। যেন আশ্বস্ত করলেন, আছি, আছি, আমরা আছি। কিন্তু আফসানা কেঁদেই চলেছেন। যেন সহ্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। শেষে বায়ুসেনারই এক মহিলা অফিসার তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হয় নামাংশের।

    এ দিন শুধু আফসান নন, পৃথিবীর মাটি থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে নামাংশকে স্যালুট করছে গোটা ভারত।

  • Link to this news (এই সময়)