দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: শীত পড়তে না পড়তেই একের পর এক ফোন আসতে শুরু করেছে বিদেশ থেকে। সৌদি আরব, ইংল্যান্ড, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা, বাংলাদেশ ছাড়াও একাধিক দেশ থেকে অর্ডার আসছে। দেশের বিভিন্ন শহর থেকেও ফোন করে দেওয়া হচ্ছে অর্ডার। মোয়া তৈরির কাজের চাপ, ব্যস্ততা শ্রমিকদের মধ্যে। বিদেশে পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় জয়নগরের মোয়া। তবে অভিযোগ, বাজারে ছেয়ে যাচ্ছে ‘নকল’ জয়নগরের মোয়া।
জয়নগরের মোয়া ব্যবসায়ী রঞ্জিতকুমার ঘোষ ও বাবলু ঘোষ। মূলত শীতের শুরুতেই মোয়ার রসদ জোগান দেওয়ার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন। এলাকার ২০০০ খেজুর গাছ সংগ্রহ করে রেখেছেন। সেখান থেকে বিখ্যাত সুগন্ধী এবং সুস্বাদু নলেনগুড় উৎপাদন হবে। কীভাবে হয় এই আসল জয়নগরের মোয়া? কনকচূড় ধানের খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে জয়নগরের মোয়া মোয়া তৈরি হয়। আর তার সঙ্গে খোয়া ক্ষীর, কাজু, কিসমিস এবং ঘি তো আছেই। গুণমানের উপর নির্ভর করে মোয়ার দাম। সাধারণত প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫০০-৬০০ টাকাতে। কখনও দাম উঠতে পারে ৭০০ টাকাও। এক-এক কেজিতে কুড়িটি করে মোয়া থাকে।
প্রস্তুতকারকরা জানাচ্ছেন, খাঁটি জয়নগরের মোয়ার ক্ষেত্রে কণকচূড় ধানের খই আর নলেনগুড়ের রসায়নটাই আসল। অভিযোগ, নকল মোয়া তৈরি হয় মরিশাল ধানের খই থেকে। আসল নলেন গুড় পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠেছে বলে শ্রমিকরা জানাচ্ছেন। উৎকৃষ্ট মোয়ার জন্য প্রয়োজন খাঁটি নলেন গুড়। জিরেন কাঠের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন শিউলিরা। রেখে দেন তিনদিন। তারপর, সেই রস উনুনে একমাত্র খড় জ্বালিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়।
জয়নগরের পাশাপাশি রয়েছে বহড়ু গ্রামের মোয়ার নাম। মোয়ার আবিষ্কর্তা যামিনী বুড়ো নাকি এই গ্রামেই থাকতেন। তবে এই গ্রাম এখন অনেকটাই প্রচারের আড়ালে চলে গিয়েছে। তবে দুই জায়গার মোয়ার স্বাদ নিয়ে এখনও চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় বলে খবর। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, জয়নগরের মোয়ায় ক্ষীরের আধিক্য সামান্য বেশি, আর বহড়ুর মোয়ায় গুড়ের। তবে বিক্রেতা থেকে প্রস্তুতকারকদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে। কারণ, জয়নগরের নামে নকল মোয়া তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। কম দামে বিভিন্ন বাজার, লোকাল ট্রেনে ওইসব মোয়া বিক্রি হয় বলে অভিযোগ। সেই মোয়া বন্ধের দাবিও তোলা হয়েছে।