• বিহারে মায়ের দুধে ক্ষতিকর ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি, গবেষণায় চাঞ্চল্য
    বর্তমান | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: মাতৃদুগ্ধে ইউরেনিয়াম। নয়াদিল্লি এইমস, পাটনার মহাবীর ক্যান্সার সেন্টার ও কয়েকটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বিহারের ছয় জেলায় মাটির নীচের জলে মিশে থাকা এই পদার্থ প্রবেশ করেছে মানবদেহে। আর তারই সন্ধান মিলেছে মাতৃদুগ্ধে। বৈজ্ঞানিক এই গবেষণা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মায়ের বুকের দুধ-নির্ভর শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর এর ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, আর্সেনিক, সিসা এবং পারদের মতো ধাতু বিহারের এই অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে এখন নতুন করে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি মিলছে। নবজাতকের খাদ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি স্বভাবতই উদ্বেগের বিষয়।

    সমস্তিপুর, বেগুসরাই, খাগাড়িয়া, ভোজপুর, কাটিহার এবং নালন্দা জেলায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত হয়েছে সমীক্ষা। ১৭-৩৫ বছর বয়সি ৪০ জন সন্তানের মাকে পরীক্ষা করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে তাঁদের বুকের দুধ। তার মধ্যে খাগাড়িয়ায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মায়ের দুধে ইউরেনিয়ামের সন্ধান মিলেছে। নালন্দায় সবচেয়ে কম। সার্বিকভাবে ছয় জেলায় প্রতি লিটার মাতৃদুদ্ধে ০-৫.২৫ মাইক্রোগ্রাম ইউরেনিয়াম মিলেছে। মায়েদের ক্ষেত্রে এটি তেমন সমস্যা না হলেও নবজাতকদের পক্ষে বিষয়টি বিপজ্জনক বলেই জানিয়েছেন নয়াদিল্লি এইমসের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের এপিজেনেটিক্সের অধ্যাপক ডাঃ অশোক শর্মা। 

    গবেষণার কাজে যুক্ত ওই চিকিৎসক বলেন, মায়েদের তুলনায় নবজাতকেরা সংবেদনশীল। কারণ  মায়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই মূত্রের সঙ্গে ওই ইউরেনিয়াম বেরিয়ে যায়। কিন্তু শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এখনো বিকাশমান। ওজন কম, এবং শরীর থেকে ইউরেনিয়াম বের করে দেওয়ার ক্ষমতাও সীমিত। ফলে অল্প পরিমাণ ইউরেনিয়ামই শিশুর জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। ঝুঁকি থেকে যায় ক্যান্সারের মতো রোগেরও। কিডনির সমস্যাও হতে পারে। স্নায়ুরোগ সমস্যা সহ বুদ্ধিবৃদ্ধিতে ব্যঘাত ঘটাতে পারে। 

    যদিও বুকের দুধে পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। তাই যে মাত্রায় ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে তা উদ্বেগজনক হলেও এখনই স্তন্যদান বন্ধ করার মতো নয় বলেই চিকিৎসকের মতামত। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বিহারের মাটিতে ইউরেনিয়াম মিশে কতটা দূষণ বাড়াচ্ছে, তা সরকারকে দেখতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে ভূগর্ভস্থ জল। গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এইমসের এই গবেষণাপত্র সরকারের কাছেও জমা পড়ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)