নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ছিনতাইকারীদের ধরতে চলন্ত ধৌলি এক্সপ্রেস থেকে লাফ। লাইনে পড়ে গিয়ে ডান হাত খোয়ালেন মহিলা যাত্রী। রবিবার সকাল ১০টা ২০মিনিট নাগাদ এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুর স্টেশনের কাছে। পরে ওই দুই দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। গণপিটুনির পর তাদের তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।
মহিলার নাম সুরমা হাজরা। তিনি হাওড়া স্টেশন থেকে ধৌলিতে উঠেছিলেন। গন্তব্য রাউরকেল্লা। রেল পুলিশ সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীরা ওই কামরায় ঘাপটি মেরে বসেছিল। ভোগপুর স্টেশন ছাড়ার পর তারা সুরমাদেবীর মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে চেন টানে। ট্রেনের গতি কমতেই ঝাঁপ দিয়ে নেমে পালানোর চেষ্টা করে দুই দুষ্কৃতী। তাদের ধরতে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন সুরমাদেবী। ধরেও ফেলেন দু’জনকে। কিন্তু তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে গ্রামের দিকে পালায় দুষ্কৃতীরা। ধাক্কা খেয়ে বেসামাল হয়ে পড়েন সুরমাদেবী। তাঁর ডানহাতটি লাইনে চলে যায়। কনুইয়ের উপর দিয়ে চলে যায় চাকা। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় হাতটি। চিৎকার-চেঁচামেচিতে ততক্ষণে গ্রামবাসীরা বেরিয়ে এসেছেন। বেগতিক বুঝে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে দুই দুষ্কৃতী। সেখানে হানা দিয়ে পাকড়াও করা হয় তাদের। চলে গণপিটুনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পাঁশকুড়া জিআরপি। দুই দুষ্কৃতীকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর ওই ট্রেনেই সুরমাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় খড়্গপুর রেল হাসপাতালে। সঙ্গে কাটা পড়া হাতটিও। কিন্তু আদৌ সেটা জোড়া লাগানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান চিকিৎসকরা।
পাঁশকুড়া জিআরপির ওসি জিয়াউল হক বলেন, দুই দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে। দু’জনেরই বাড়ির হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায়। নাম মহম্মদ সামসেদ ও মহম্মদ ইমরান। ওই মহিলা যাত্রীকে টার্গেট করেছিল তারা। মানিব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার পর গলার চেন ছিনতাইয়ে চেষ্টা করে। তখনই প্রতিরোধের মুখে পড়ে দুষ্কৃতীরা। তারা ট্রেন থামানোর চেন টেনে নীচে ঝাঁপ দেয়। ওই মহিলা তাদের ধরতে গিয়ে পড়ে যান। তার জেরেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
এদিনের ঘটনায় হতভম্ব সুরমাদেবীর পরিবার। রেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরাও। সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে (হাওড়া-জকপুর) প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভোগপুর ইউনিটের সেক্রেটারি সমীর সামন্ত বলেন, ‘দিনে দুপুরে এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে এই ঘটনা ভাবাই যায় না! ফলে রেলের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই।’