ক্রাচ হাতে ইনিউমারেশন ফর্ম নিয়ে ঘুরছেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষক
বর্তমান | ২৪ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, ঘাটাল: এসআইআরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষকও বিএলও’র দায়িত্ব থেকে রেহাই পেলেন না। ৬৫ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়েও দিন রাত এক করে কাজ করে যেতে হচ্ছে ২৩০-দাসপুর বিধান সভার ৮০ নম্বর বুথের বিএলও সৌগত ধাড়াকে। তিনি দু’হাতে এলবো ক্রাচে ভর করেই বাড়ি-বাড়ি এসআইআরের ফর্ম নিয়ে ঘুরছেন। সৌগতবাবুর কথায়, কাজ করতে আমার যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমার সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু সাড়া মেলেনি। তাই কষ্ট হলেও দায়িত্বের সঙ্গে কাজটা করতে হচ্ছে। যদিও ২৩০ বিধানসভার সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (এইআরও) তথা দাসপুর-২ এর বিডিও প্রবীরকুমার শীট বলেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (এআরও) বিএলও’দের নিয়োগপত্র দেন। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। প্রথম দিকে আমাদের জানালে বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারত।
সৌগতবাবুর বাড়ি দাসপুর-২ ব্লকের কৈজুড়ি গ্রামে। পেশায় তিনি কৈজুড়ি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। জন্ম থেকে সুস্থ থাকলেও স্কুলছাত্র অবস্থায় জাম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন সৌগতবাবু। স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা ধরা পড়ায় বহু চিকিৎসা করিয়েও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। ৬৫ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা রয়েই গিয়েছে শরীরে। বিশেষ ধরনের জুতো এবং দু’হাতে এলবো ক্রাচ ব্যবহার করেই চলাফেরা করেন। ২০১৭ সালের প্রথমে ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান। পরে নিজের গ্রামে বদলি হয়ে আসেন তিনি।
সৌগতবাবু যে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যুবক তা ওঁর সার্ভিস রেকর্ডে রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, সম্ভবত সেই কারণেই আট বছর চাকরি জীবনের আগে কখনও তাঁর ভোটে বা বিএলও’র দায়িত্ব পড়েনি। কিন্তু এবারই আচমকাই তাঁর এসআইআরের মতো বিশাল চাপযুক্ত ডিউটি ঘাড়ে পড়ে গিয়েছে। ৮০ নম্বর বুথে ভোটার সংখ্যা ৮০০’র কাছাকাছি। যেখানে সৌগতবাবুকে চলাফেরা করতে হলে হাত দু’টিতে ক্রাচ ধরে রাখতে হয় সেই পরিস্থিতিতে ৮০০ ভোটারের দু’কপি করে মোট ১৬০০ এসআইআর ফর্ম সহ অন্য নথি নিয়ে দোরে, দোরে যেতে হচ্ছে। প্রত্যেক দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ি, বাড়ি গিয়েই ফর্ম পূরণের আপডেট সংগ্রহ, পূরণ করা ফর্ম ভোটারদের থেকে নিয়ে সেগুলি দায়িত্ব সহকারে আপলোড করতে হচ্ছে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ওই শিক্ষকের বাবা স্বপন ধাড়া ও মা সবিতা ধাড়া বলেন, প্রত্যেক বারই ভোট এলে বা ভোটার তালিকার সংশোধনের কাজ শুরু হলে টেনশনে থাকি। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি ছেলেকে যাতে ডিউটি দেওয়া না হয়। কিন্তু এবার আর তা হল না। ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। শরীরের এতো সমস্যা নিয়েই ওকে এত ধকল সহ্য করে কাজ করতে হচ্ছে।
দাসপুর-২ ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য সৌমিত্র সিংহরায় বলেন, সম্প্রতি একের পর এক বিএলওর অসুস্থতার খবর সামনে এসেছে। জলপাইগুড়ির মালবাজারে এক বিএলও আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। যেখানে এসআইআরের চাপে সুস্থ কর্মীরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেখানে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিকে এই ডিউটি দেওয়া কোনও ভাবেই মানা যায় না।