নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বিধাননগর: শহরজুড়ে ডেটিং অ্যাপ চক্রের রমরমা। কোথাও কল সেন্টার, কোথাও সামাজিক মাধ্যমে চলে এই কারবার। আবার বন্ধুত্ব পাতানোর বিজ্ঞাপনের আড়ালেও চলছে এই ব্যবসা। সবক্ষেত্রেই কণ্ঠস্বর মহিলাদের। অ্যাপে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে গ্রাহক কী ধরনের সার্ভিস চাইছেন, তা বুঝে নিয়ে চলে কথাবার্তা। সঙ্গে থাকে সেক্সের সুড়সুড়ি। গ্রাহক রাজি হলে ওই তরুণীরাই ঠিক করে দেন, কোন হোটেলে আসতে হবে। রুমে ঢোকার পর শুরু হয় ব্ল্যাকমেলিং। বন্ধঘরে লাস্যময়ীরা ইচ্ছামতো টাকা দাবি করে বসে। তারপর বাধ্য করে অনলাইনে টাকা ট্রান্সফার করতে। অনেক ক্ষেত্রে আবার এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে পাসওয়ার্ড জেনে তুলে নেয় টাকা। লালসা মেটাতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধনী ঘরের যুবক, পড়ুয়া বা পদস্থ চাকরিজীবীরা শিকার হচ্ছেন এদের। মান-সম্মানের ভয়ে অধিকাংশই অভিযোগ জানাতে থানায় যান না। ফলে টাকা লুট করেও পার পেয়ে যাচ্ছে এই মহিলারা। লালবাজারের দাবি, ডেটিং অ্যাপ নিয়ে মাঝেমধ্যে অভিযোগ আসে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত অক্টোবরেই তারা মিন্টো পার্ক থেকে ডেটিং অ্যাপ চালানোর অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। যার মধ্যে ১৬ জনই তরুণী।
পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে সেক্সের সুড়সুড়ি দিয়ে ডেকে এনে টাকা লুট করা হয়। কোনও কোনও তরুণী আবার বিনিয়োগের টোপ দিয়েও ডেকে পাঠায়। বাগুইআটির এক ব্যবসায়ী তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। ডেটিং অ্যাপের সূত্র ধরেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণীর। হাই-রিটার্নের টোপ দিয়ে তরুণী তাঁকে অনলাইনে শেয়ার ট্রেডিং করতে বলেন। নয়া বান্ধবীকে বিশ্বাস করে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন বাগুইআটির ওই প্রৌঢ়। কিন্তু, লাভের টাকা দূরের কথা, বিনিয়োগের অর্থও ফেরত পাননি তিনি। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি শেষমেশ বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রৌঢ় থাকেন বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরে। গত ২৭ আগস্ট একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণীর। তারপর দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা চলে ফোনে। তরুণী সুরেলা কণ্ঠে তাঁকে শেয়ার ট্রেডিংয়ের টোপ দেয়। বিশ্বাস অর্জনের জন্য লেনদেন ও লভ্যাংশের কিছু ভুয়ো স্ক্রিনশটও পাঠায় ওই তরুণী। তা দেখে প্রথমে ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন তিনি। রিটার্ন পান ছ’হাজার টাকা। এরপর আরও উৎসাহিত হয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাংকের দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৬৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৫০ টাকা বিনিয়োগ করেন ব্যবসায়ী। কিন্তু রিটার্নের টাকা না পাওয়ায় জিজ্ঞাসা করলে তরুণী বলে, আরও বিনিয়োগ করতে হবে। তখন বুঝতে পারেন, প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন।